বিদেশে অবস্থানরত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের চিঠিপত্র থেকে মোনায়েম সরকারের প্রবাস জীবনের কর্মকাণ্ডের একটি খণ্ড চিত্র পাওয়া যাবে। তার বেশিরভাগ চিঠিপত্র অ্যারোগ্রামে (খরচ কমানোর জন্য) লেখা। তার কপি নেই বলে উল্লেখ করা গেল না। আবার মোনায়েম সরকার টেলিফোনেও কলকাতা থেকে অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
Bangladesh National Awami Party (NAP)
United Kingdom Branch
147 Colegrave Road, London, E.15
Telephone: 01-555 5892
Date : 01.12.1975
প্রিয় মোনায়েম ভাই,
আপনার ২৫/১১ তারিখের চিঠিটা পাইয়াছি। দেশের অবস্থা তো মোটামুটি আমরা এখান থেকে জানি। তবে আপনার কাছ থেকে ভালো খবর পেলাম। জেনে খুবই খুশি হলাম যে সব বন্ধুই কুশলে আছেন।
আমরা এখানে গোপনীয়ভাবে নয় বরং প্রকাশ্যভাবেই আন্দোলন করে যাচ্ছি। ১৫ আগস্টের পর মোট ৫টা প্রচারপত্র বের করেছি। একটা বিক্ষোভ মিছিলসহ দূতাবাসে গিয়ে বিক্ষোভ করেছি। বেশ লোক হয়েছিল। দেশ থেকে প্রচারিত গত অক্টোবরের শেষের দিকে প্রচারপত্র ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্ত নির্মূল করুন’ জাতীয় সংগ্রাম পরিষদের ডাক এখানে কয়েক হাজার পুনঃ মুদ্রণ করে বিলি করেছি। এখন আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে নিয়মিত বুলেটিন বের করার ব্যবস্থা করেছি। সুতরাং এখানে আন্দোলন যতটুকু সম্্ভব করার চেষ্টায় আছি। প্রচারপত্র যেগুলো আমরা বিলি করেছি, পরে প্রত্যেকটার কপি আপনার কাছে পাঠাবো।
এখানে প্রবাসী বাঙালিদের মতামত অধিকাংশই দেশের মতো ভারতবিরোধী। আমাদের প্রোপাগান্ডা চলছে মতামত পাল্টানোর জন্য।
ড· কামাল, আবু সাঈদ (বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী) ও রুহুল কুদ্দুস এখন নীরব আছে। অবস্থা দেখছে। তবে কেউ-ই বিপক্ষে কিছু করছে না আপাতত। ড· কামাল ও রুহুল কুদ্দুসের সাথে আলাপ চলছে যাতে আমাদের পক্ষে কাজ করানো যায়। আবু সাঈদ বলছে এখানে এখন মাস্টারি শুরু করবে।
আমরা এখানে প্রচারের দিকে জোর দিয়েছি। আমরা আপনাদের সব রকমের খবর জানার জন্য খুবই ব্যস্ত। চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তারিত জানাবেন। কলকাতার জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ কি আপনারা করেছেন। আমরা ও আমাদের ‘যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ’ বলে পরিচয় দিচ্ছি।
নতুন যে ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দিলাম সেটা হচ্ছে আমার বাড়ির। দেশ থেকে আসার পর কিনেছি। এখন থেকে এই ঠিকানায় যোগাযোগ করবেন। অবশ্য আগের ঠিকানায় আমার অফিস। সুতরাং ওখানেও আমাকে পাওয়া যাবে বা চিঠি আসলে পাবো। তবে বাড়ির ঠিকানাই ব্যবহার করবেন। আগের ঠিকানা সকলের পরিচিত। বিশেষ কি। আমরা এক প্রকার আছি। সকল বন্ধুর কাছে শুভেচ্ছা রইল। ‘মেডাম’? ভালো। ইতি।
রউফ
(রউফঃ যুক্তরাজ্য ন্যাপের প্রাক্তন সভাপতি আবদুর রউফ)
১৬·০১·১৯৭৬
প্রিয় মোনায়েম ভাই,
আপনার ২/২/৭৬ ইং তারিখের চিঠির সাথে ১৫ আগস্ট থেকে ঘটনার বিবরণ পেয়েছি। গতকাল আপনার চিঠি ও অন্যান্য সব ব্যাপারে অন্যান্য সব বন্ধুর সাথে বিস্তারিত আলাপ হলো। আপনার কাছে নিয়মিত ২৫ কপি করে ‘প্রতিরোধ’ পাঠানো হচ্ছে। পাচ্ছেন কিনা জানাবেন।
আমাদের পক্ষে কলকাতা-লন্ডন-কলকাতা ভাড়া দেয়া সম্্ভব হবে না বলে বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলেন গতকাল।
আপনার প্রেরিত ঘটনার বিবরণের রিপোর্টটা আমরা বুকলেট আকারে ছাপাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু লন্ডনে আমাদের নিজস্ব বাংলা টাইপরাইটার থাকলে টাইপিস্টের অভাব। প্রতি সপ্তাহে ‘প্রতিরোধ’ বের করতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। তারপরও বিলাতে বাংলা প্রিন্টিং-এর মান অনেক নিচু হবে বুঝতেই পারছেন। তাই সবাই বললো, যদি সম্্ভব হয় এই রিপোর্টটা কলকাতা থেকে হাজার-দুই হাজার কপি অতি তাড়াতাড়ি ছাপিয়ে পাঠাতে পারবেন কিনা এবং যদি ছাপাতে পারেন, তবে মোট কত খরচ যাবে আমাদের জানালে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। ‘যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ’-এর নামে বা অন্য যে কোনো নামে ছাপাতে পারেন। প্রয়োজন বোধে আরো পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে আপটুডেট করে ছাপাতে পারেন। সিপিআই-এর প্রেস থেকে অল্প খরচে ছাপাতে পারেন। যাই হোক, হাজার-দুই হাজার বুকলেট সংগ্রামী কভার দিয়ে ছাপিয়ে বিমানে পাঠাতে কত খরচ যাবে তাড়াতাড়ি জানান।
আপনার কোনো বন্ধু আমার সাথে দেখা করেনি। রুহুল কুদ্দুস ও কামাল হোসেনের সাথে আমাদের এই রকম ভাবে কোনো আলাপ হয় নাই। তবে তারা পক্ষে আছে।
আর বিশেষ কি। ভালো আছি।
ইতি-
রউফ
Elizabeth House, Oxford
২৪/০৬/১৯৭৬
My dear Bakul,
আপনার চিঠিখানা পেলাম। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর দিয়েছেন। সে জন্য অশেষ ধন্যবাদ। অজিতদার চিঠির উত্তর ২/৩ দিন আগে দিয়েছি। আজ বি· মিত্রের চিঠি পেয়েছি। আগামী রোববার আমাদের মিটিং। ঐদিন তার চিঠি ও অন্যান্য কাগজপত্র বন্ধুদের দেবো। আপনি নিয়মিত বিস্তারিত খবর দিয়ে লিখবেন।
‘প্রতিরোধ’ আপাতত বন্ধ। অর্থাভাবে আমরা এগুতে পারছি না। দুই বন্ধুর কোনো বন্ধুই আমাদের সঙ্গে আজ পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। শুধু দাদার সঙ্গেই আমাদের যোগাযোগ আছে। বন্ধু দুটি যাতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার ব্যবস্থা করবেন। অর্থ সাহায্য ছাড়া ইংলিশ বুলেটিন বের করা সম্্ভব নয়। এখানে অনেক কাজ করার আছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানকার C.P.G.B. ছাড়াও অনেক Labour M.P. (Tribune Group), Liberation (সাবেক Movement for colonial rendom) আমাদের সাথে পেয়েছি। এদের সাথে আমাদের অনেকবার আলাপ-আলোচনা হয়েছে। গতকাল Liberation-Gi E.C. Meeting -এ আমি গিয়েছিলাম। আমাদের কমিটিকে ওরা Affiliation দিয়েছে। আমাদের Politically সক্রিয় সাহায্য দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। Lord Furner Brockway-এর নেতৃত্বে একটা ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশ হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে কতগুলো রাজনৈতিক দাবি পেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আশা করি, বেশ কিছুসংখ্যক Dignitories-এর Messege পাঠাতে পারবো। Mr. Judith Hart (Former Overseaes Development Minister)-এর সঙ্গে কিছুদিনের মধ্যেই দেখা করবো। আমি ওনাকে লিখেছিলাম; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সময় নির্ধারিত হয়নি। একে বোঝাতে পারলে আমরা অনেক এগিয়ে যাবো। চিলিয়ান ফ্যাসিস্ট জান্তাবিরোধী এখানকার আন্দোলনে এর ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয়। লেবার পার্টির জেনারেল সেক্রেটারির কাছে লিখেছি। এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি। ট্রেড ইউনিয়নের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতার সাথেও শিগগির দেখা করার চেষ্টা করব। বুঝতেই পারেন এদের অনেক Misgivings আছে। বিশেষ করে গার্ডিয়ান পত্রিকা এদের বিভ্রান্ত করছে। অবশ্য কয়েকবার বসে আলাপ-আলোচনা চালাতে পারলে বেশ সুফলও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের সময় খুব কম। অল্প কয়েকজন লোক কাজ করছি। তাছাড়া এসব আলাপ-আলোচনায় আমাকেও থাকতেই হয়। এরা অনেক প্রশ্ন তোলে। এগুলোর উত্তরও দিতে হয়। এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু অর্গানাইজেশন আছে। এদের কাছে আমাদের কাগজপত্র পাঠাচ্ছি। এখনও এদের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। ১৫ আগস্টের আগে কয়েকটা অর্গানাইজেশনের সাথে আলাপ-আলোচনা করার আশা রাখি। ১৫ আগস্টকে সামনে রেখে আমরা আমাদের কাজ ও প্রচার চালিয়ে যাবো।
আপনার প্রেরিত বুকলেটের প্যাকেটটি পেয়েছি। যথাস্থানে এগুলো পাঠিয়েছি। অর্থাভাবে বুকলেটটি (Bangladesh Victim of Imperialist Conspiracy) এখানে Reprint করা সম্্ভব নয়। আপনি কমপক্ষে ৩০০ বুকলেট যত শিগগির সম্্ভব পাঠাবেন। চট্টোপাধ্যায়কে পৌঁছে দিলেই উনি দাদার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। বুঝতেই পারেন এগুলোর প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। বুকলেটটির মাধ্যমে অর্গানাইজেশনের মেসেজ সংগ্রহ করা সহজতর হবে। এ ব্যাপারে কি করলেন তাড়াতাড়ি জানাবেন।
আপনার টিকিটটা ওখানে জমা দিয়ে দেবেন। দাদার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি টিকিটটা ক্যান্সেল করে দিয়েছেন। তবে আপনি যখনই আসতে পারবেন, তখনই আপনাকে টিকিট ও অন্যান্য কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়া হবে। দাদার ইচ্ছা অনুযায়ী এ কথাগুলো লিখছি। ডা· মোশাররফ হোসেন ম্যানিলায় চাকরি নিয়ে গেছেন। ওনার ঠিকানা সংগ্রহ করে আপনাকে পাঠাব।
Dr. N. Islam
Elizabeth House, Oxford
(Dr. N. Islam : ড· এন· ইসলাম বঙ্গবন্ধুর আমলে পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান, তখন লন্ডন প্রবাসী)
14, HILLBURY ROAD
LONDON, S.W.-17
Date : 26.03.1976
মোনায়েম সাহেব,
আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু নবীন বাবুর কাছ থেকে এখানকার খবর জানতে পারবেন। আপনি কবে আসছেন তাড়াতাড়ি জানাবেন।
১· ড· কামাল হোসেন
২· ড· মোশাররফ, ড· রেহমান সোবহান, ড· নূরুল ইসলাম
৩· দেশ থেকে একজন আসা দরকার
৪· রুহুল কুদ্দুস। Frustrated, Analysis of the situation is correct but differs with us as regards our approach. (Socialist- Address and Phone No. নিয়েছি। তিন মাস আগে প্রফেসরের কাছে চিঠি লিখেছে। কোনো উত্তর পায়নি। স্থপতি মাজহারুল ইসলাম ও শওকত ওসমান, নূরুল ইসলাম সম্পর্কে opinion ভালো নয় –
৫· বাংলার ডাক – আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
৬· আওয়ামী লীগ – বাদশা
৭· ২৭ মার্চ
৮· আবু সাঈদ চৌধুরী -Contradictory statement
৯· প্রতিরোধ – Finance
১০· ইলা মিত্রের ঠিকানায় ডা· সরোয়ার
১১· কমরেডকে কোনো এক কমরেডের সাথে দেখা করিয়ে দেবেন।
১২· আমার সাথে যোগাযোগ
১৩· নিউজ, লিফলেট, লেখা, যোগাযোগ
শুভেচ্ছান্তে
সাইদুর রহমান
(সাইদুর রহমানঃ ব্যারিস্টার সাইদুর রহমান যুক্তরাজ্য সিপিবি-র নেতা)
Baby (Babyমোনায়েম সরকারের ছদ্মনাম)
C/o- Alaka Chattapadhyay (দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী)
3, Sambhunth Pandit Street, Calcutta-20
Phone : 44-1570
(Ena Bose : কলকাতার মনীষা গ্রন্থালয়ের মালিক দিলীপ বোসের স্ত্রী)
200 L S.P. Mukherjee Road, Calcutta-26
Phone : 41-1207
কলকাতা
১৯/১১/৭৬
MESSAGE FROM BAKUL
To : SAIDUR RAHMAN
1. Received your letter and two issues of SONAR BANGLA. Hope you have received my earlier message. Friends will sent one thousand copies per week for inside soon. Hope friend’s assistance towards SONAR BANGLA will continue. Don’t worry, publication of ‘Protirood’ paved the way for Banglar Dak, Bazrakantha, Sunrise & Sonar Bangla. Let us be very practical, we can’t do so much from outside. We can fruitfully do the international propaganda, please post the copies according to earlier message.
2. We should try so maintain a broad unity in the action committee, there might be currents & cross currents. If the reactionary elements try to split the action committee they will do it deliberately to sabatage the movement according to the direction and financial backing of their imperialisht master. Everything will be allright when the issued resistance will be intensified. Inside friends are gaining ground; they will be gainer in the event of election or no election.
3. We are having better liaison with Kader, he is also doing well. Some Gour Gopal Shah will sent news of resistance and photograph to you on behalf of Kader.
4. Please try to maintain better relation with Banglar Dak & Chowdhury, they would not be able to go very far, they will have to be with the patriots otherwise this efforts will be imperfective. Let Moni Singh & Muzaffar explain their conduct; you should try to be friendly with Ruhul Quddus & Dr. Kamal alike. Please don’t identify yourself with any grouping.
5. Raushan Ali & Chowdhury would not be able to go because their presence is not recognized here and they have got nopassport. Moreover what they will do there? Moju Bhai has gone to the capital, he will try to go to you but it seems to be very difficult.
6. Please try to publish special issue on 16th December. We will try to send some news & articles from time to time, you can have written to Dr. Kamal & Ruhul Quddus. You can approach Mrs. Hamida Hossain, Rahman Sobhan, Mukul, Dr. Nurul Islam for articles.
Bakul (Monaem Sarker)
17 HERMITAGE LANE
LONDON-N.W-2, U.K.
04.08.1976
My dear Monaem Sub,
কিছুদিন আগে আপনার একটি পত্র পেয়েছিলাম। এখানে আমাদের কাজ বোধহয় এখন একটু জোরেশোরে চলবে। কারণ বাতাসের direction একটু ঘুরেছে বলে মনে হচ্ছে। সুযোগ পুরোপুরি নেয়া দরকার। এর জন্য খুব জরুরি আপনাদের ৫-৬ জনের বিভিন্ন মতের এখানে ৪-৫ সপ্তাহের জন্য একত্রে একবার আসা। এটা যত শিগগির হয় ততই ভালো। আমাকে রাজধানী থেকে একটা খবর পাঠানো হয়েছে। আপনাদের এখানে আসতে বলাও আমার জন্য সুযোগ করে দেয়া, যদিও আমার পক্ষে খুবই কষ্টকর, তারপরও চেষ্টা করা হচ্ছে। Sponsorship or entry visa-র জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও নাম-ধাম, nationality ইত্যাদির একটু খবরাখবর না পেলে সেটা সম্্ভব হবে না। সত্বর উত্তর দেবেন। আপনার ঠিকানায় রওশন সাহেবকে একটা চিঠি দিয়েছিলাম। পেয়েছেন কিনা জানতে পারলাম না। আমাদের সংগ্রাম পরিষদের President Mr. Gaush Khan। আপনাদের আসার ব্যাপারে তাকেও আপনারা চিঠি দেবেন। সবাই গাফ্ফার চৌধুরীকে চিঠি দেয়, তাকে কেউ লেখে না। তাতে তিনি একটু মনকষ্টে আছেন। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে তিনি নিজেই এগিয়ে এসে সংগ্রাম পরিষদ করেন, যখন কেউই ছিল না। বুড়ো মানুষ খুব সিনিয়র, তার সেন্টিমেন্টের দিকে দেখা উচিত। কাদের সিদ্দিকী, মি· লতিফ সিদ্দিকী ও অন্যরা গাফ্ফারকে চিঠি লেখে। তাকে লেখে না- এটাও ঠিক না। রওশন সাহেব ও আনওয়ার চৌধুরী সাহেবকে বলবেন অবশ্য অবশ্য তাকে চিঠি লিখতে ও মাঝে মধ্যে লিখতে। যদি সম্্ভব হয় মি· লতিফ সিদ্দিকী ও মি· কাদের সিদ্দিকীকে খবর দেবেন তাকে চিঠি দিতে; যদি অসুবিধা না হয়। অন্যরাও যেন তাকে চিঠি দেয়। আমি মাজহার ভাইকে চিঠি দিয়েছি। সেটাতে এখানকার কিছু কিছু বিষয়ে লিখেছি। সেটা অবশ্য অবশ্য দেখবেন। রওশন সাহেবদেরও দেখাতে বলবেন। কারণ তাদেরও জানা দরকার।
যেহেতু এখন অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে দেশের ঘটনাবলির বিস্তারিত জানা আমাদের প্রয়োজন। বিশেষ করে অ্যাকশন, যা ঘটবে- এটা এখানের লোকদের উৎসাহিত করবে। অতএব জানাবেন সময় সময় বা অন্যকে বলবেন লিখতে।
যদিও প্রোগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা একটা খসড়া বানানোর চেষ্টা করছি। তবু আপনারা না আসা পর্যন্ত সেটার ড্রাফট বের করা যাবে না। তবে আমাদের এখানে কর্তব্য কি সে সম্পর্কে যেহেতু আপনাদের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট Communication gap আছে, সেহেতু আমরা যথেষ্ট Confusion-এ আছি। যার ফলে আমাদের কাজ অগ্রসর হচ্ছে না। এ সম্পর্কে পুরোপুরি আলোচনা হওয়া দরকার এবং আমাদের কর্তব্য পুরো ফবভরহফ হলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে। Mr. Gaush Khan-এর ঠিকানা ALLAHABAD RESTAURANT, 12 GOLD HAWK ROAD, LONDON W-12, U.K.। মি· গাউস খানকে চিঠি দেবেন বা অন্য দুই-একজনকে চিঠি দিতে বলবেন। ভালো হবে রওশন সাহেব ও বা আনওয়ার চৌধুরী সাহেব যদি চিঠি দেন।
ইতি-
আপনার ভাই
(রুহুল কুদ্দুসঃ আগরতলা মামলার অভিযুক্ত, বঙ্গবন্ধুর মুখ্য সচিব)
লন্ডন
১২/০৫/১৯৭৭
Dear Bakul,
আপনার পত্র পেলাম। এখানকার যা অবস্থা তাতে করে কোনো কাজ করাই সম্্ভব নয়। গাউস খান একেবারে হাল ছেড়ে দিয়েছে। তাছাড়া এক গ্রুপ বেরিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ করেছে। তারা মনে হয় মিজান চৌধুরীর সঙ্গে সহযোগিতা করবে। তার পরে গাফ্ফারও আক্রমণ দ্বিগুণ তিনগুণ চালাচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা ও মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে। মাজহারুল ইসলামের ফিরে যাওয়াটাই আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখানে বেশিরভাগ লোকের মত যে এখানে একটা আওয়ামী লীগ করা হোক মি· গাউস খানের মাধ্যমে; ন্যাপও করা হোক। তাছাড়া একটা Jt. action committee-ও থাকুক। গাউস খান বাকশাল ভাঙতে একেবারে নারাজ। ফলে কাজ প্রায় বন্ধ। তিনি বলেন সবাই দেশে, কলকাতায় ও কাদেরের ওখানে বাকশালে বিশ্বাসী। তাছাড়া আনওয়ার চৌধুরীও সেইভাবে এক চিঠি দিয়েছেন গাউস খানকে। ফলে মি· গাউস খান একেবারে বেঁকে আছেন, ফলে অর্গানাইজেশন প্রায় উঠেই গেছে। বর্তমানে যখন দেশে অর্গানাইজেশনগুলো individually revive করেছে তখন এখানেও সেটাই করা উচিত। তার পরে একত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার চেষ্টা করার মধ্যে ফল পাওয়া যাবে। অন্যভাবে করলে নানান অসুবিধা। Constitution-এর 4th Amendment-এর ফল হিসেবে যে বাকশাল- এক নেতা, এক দল ইত্যাদি আর এখন মোটেও সম্্ভব নয়। যাক ওখান থেকে যদি আওয়ামী লীগাররা চিঠি দেন মি· গাউস খানকে যে তাদের কোনো আপত্তি নেই আওয়ামী লীগ করাতে, তবে হয়তো মি· গাউস খান agree করতেন আওয়ামী লীগ করতে। আওয়ামী লীগ করলে হয়তো চান্দা কিছু উঠতে পারে। অন্যথায় নয়। বাকশালের নামে কেউ চান্দা দিতে চায় না। অতএব ইংরেজি কাগজ বার করা একরূপ অসম্্ভব। তবু আমরা চেষ্টা করব। আপনারা (১) Fake Referendum; এই টাইটেলে একটা লেখা টাইপ করে পাঠাবেন। এর মধ্যে থাকা উচিত (a) Zia’s coming to power through murder, deceit and froud-not for surrendering to people, (b) methodology is a perfect system to rig the referendum, (c) No one will dare to place ballot papers to ‘No’ box in presence of army officers, (d) Ballot papers are serialy numbered to detect the person voting agent, (e) Period of presidency not menteried, (f) He has given a 19-point programme- why if he is not campering to remain in power, (g) 1978 election not certain, (h) No promise given that power will be surrendered to these peoples representatives etc. other points what ever you may think.
2. Amendment of the constitution : He has abolished all the four state principles not only secularism : (a) Democracy- in grave from 15th August ’75, (b) Nationalism murderd slowly a last stroke given by aboliohing secularim (c) Socialism given new definition unheared of a perfect capitalistic concept – named socialism by him.
Two National Liberation Struggle.
‘জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম’ replaced by ÔIndependence War 1971’ এর অর্থ সমগ্র বাঙালি জাতিকে অপমান করা। ১৯৪৮ সাল থেকে আস্তে আস্তে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা। ১৯৪৮-এর ও ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন। ১৯৫৪-এর নির্বাচন; ১৯৬২-১৯৬৪-র ছাত্র আন্দোলন; ১৯৬৬-র ৬-দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯-এর ‘আগরতলা মামলা’ ও ‘গণ অভুøত্থান’; ১৯৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১-র ১ থেকে ২৫ মার্চের অসহযোগ আন্দোলন; সবই অস্বীকার। আরব্য উপন্যাসের গল্পের মতো ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সকাল বেলা বাঙালিরা সুখে শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল- হঠাৎ এক মেজর সাহেব বললেন স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে হবে, আর লক্ষ লক্ষ বাঙালি অমনি স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করল। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে বললেন এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, দেশকে মুক্ত করে যাব এবার, সেটা মূল্যহীন! তাছাড়া আগরতলা মামলাই প্রথম বাঙালিদের সামনে স্বাধীনতার কথা প্রকাশ্যে বলে- তারও কোনো অর্থ নেই! যাক এই Constituion Ñ amendment-এর ওপর দুইটা পয়েন্টও নিয়ে আর একটা লেখা টাইপ করে পাঠাবেন। দুটা লেখা শীঘ্র পাঠান। যদি সম্্ভব হয় ইংরেজিও পাঠাবেন, বাংলাও পাঠাবেন অতি শীঘ্র। তাছাড়া অন্য curent affairs সম্পর্কে যদি লেখা পাঠাতে চান তাও পাঠাবেন শীঘ্রই। প্রথম সংখ্যা (নতুনভাবে) যত শীঘ্র সম্্ভব ছাপাতে চাই- অবশ্য যদি পারা যায়।
‘সংবাদ’, ‘হলিডে’, ‘জাহানে নও’ ও ‘ইত্তেফাক’-এর কাটিং অবশ্য অবশ্য পাঠাবেন। তা না হলে আমাদের বাংলা কাগজও বন্ধ হয়ে যাবে।
আপনারা সবাই বাংলা সোনার বাংলা পাচ্ছেন কিনা জানাবেন। আপনাকে ও গামাকে-৬০ করে, আগরতলা-১০০, তুরা-৭৫, নাসিম-৪৫, মাহফুজল বারী ও সামু মোট-৩০, শ্যামবাবু-২৫, রওশন সাহেব-১০; ঠিক আছে কিনা জানাবেন।
ওখানে নেতাদের একটু মুখ খুলতে বলবেন অর্থাৎ এখানে যাকে ইচ্ছা একটা-আধটা চিঠিপত্র লিখতে বলবেন এবং একটু যোগাযোগ রাখতে বলবেন। গত দুই বছর ওনারা যা করেছেন তা আন্দোলনে একটুও সাহায্য করেনি। কি করা উচিত, কি করা উচিত না একটু তো আলাপ-আলোচনা হওয়া দরকার। একেবারে মুখ বন্ধ করে বসে থাকলে কি করে চলবে। বহুবার বলা হয়েছে, চিঠি দেয়া হয়েছে- কেনা সাড়া নেই।
মোজাফফ্র ন্যাপের-রাজশাহীর মি· আতাউর রহমান জিয়াকে এক লম্বা অভিনন্দন দিয়েছে। কে কি করছে জানা উচিত। দেশের বর্তমান অবস্থা একটু বিস্তারিত জানাবেন। আপনাদের কি ঢাকার সঙ্গে কোনোই যোগাযোগ নেই? আওয়ামী লীগের নেতাদেরও কি সেই অবস্থা? ছাত্রলীগ, যুবলীগের কি একই অবস্থা! কেউ কিছু বলতে পারে না কেন? সত্বর উত্তর দেবেন। ইতি-
আপনার ভাই
রুহুল কুদ্দুস
(বকুলঃ মোনায়েম সরকার, রুহুল কুদ্দুসঃ আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত, বঙ্গবন্ধুর মুখ্য সচিব)
12/11/76
MESSAGE FROM BAKUL SARKER
To : SAIDUR RAHMAN MIA
Copy to : MR. RUHUL QUDDUS
MR. GAUS KHAN
1. We think there is some problem in the postal system. That is why we are in difficulty to maintain constant liaison. It may so happen that letters are intercepted somewhere some how. However, we should continue to write to each other. Important matter may be communicated through friends channel.
2. The publication of ‘SONAR BANGLA’ has enthused the militant cadres here and inside BD.
3. We are exploring the possibilities of circulating one thousand copies of ‘SONAR BANGLA’ inside BD though there is a lot of obstacles, repression & tortures, some copies may be circulated in Calcutta and Delhi. After final arrangements and decision we will let you know through friends how much copies to be sent & hope to send?
4. Please try to send at least two copies per week to all headquaters of world (International) Organization such as UNO. World Peace Council, WFDY, IUS, World Trade Unions & World Women Organization, Afro Asian People’s Solidarity Committee and other International Organizations.
All diplomatic mission situated in London
All Organization situated in London
5. Please try to send by post directly to BD press club, ENA, BSS, Observer, BD Times, Ittafaq, Sangbad and Dainik Bangla.
6. Please try to send directly from London to the leaders of AL, NAP & CPB and also to some members other ruling clique such as Sayem & Zia.
7. Please see that articles & news are carefully drafted so that patriots inside the country too are not much embarrassed.
8. Patriotie forces of AL, NAP and CPB are gaining ground after revival. They are trying to consolidate their respective organizations and fronts. And secretly trying to work together with united understanding. Looking at the organizational strength of the patriots, the reactionary force is getting frustrated. So the prospect of election is gaining ground. In the ruling clique, there is a sharp grouping. Zia’s influence is declining. Sayem is backed by Khandoker Mustaque, Muslim League & Jammat.
9. Reactionary elements tried to split AL, but later on they did not dare to split AL they could not split due to the growing pressure of militant section. Though they have made little adjustment in the manifesto before getting clearance from the ruling clique after 8 to 11 hours of discussion with 700 delegates, About 1,500 activist were present outside the conference hall in Hotel Eden to pressurize the decision. The manifesto was earlier dedicated in the name of Bangbandhu, this portion was deleted before submission again. But in the conference hall Bangabandhu’s photo was placed in a chair with floral wreaths. All speaker including Mijanur Rahman Chowdhury delivered speech about Bangabandhu.
Even from BD Radio they are Broad Casting the news of resistance & fight in Sylhet, Mymensingh, Comilla, Tangail, Chittagong and Chittagong hill tracts.
People believes that AL will attain majority in election if election is held at all & not rigged. Even govt. intelligence report shows that AL. will be majority in election.
Latest reports from inside BD shows that political situation is still complicated and unpredictable. Ruling clique is speaking of election for national and international reasons, but the prospect of election is very blink. The clique is trying for a military-politico govt. The patriots are trying through organizational consolidation & movements to forge unity of patriotic forces.
What about Prof. Roy’s sponsorship. Please send it immediately. He will be going to London within one month.
‘Bazra Kantha’ a fortnightly earlier published by some patriots is going to be published again soon. Copy of the fortnightly will be sent to you when it will come out.
(বকুল বাবুঃ মোনায়েম সরকার)
২৩/০৯/১৯৭৬
জনাব বকুল সরকার সাহেব,
আমার সশ্রদ্ধ সালাম ও সংগ্রামী অভিনন্দন নেবেন। আপনার ও মাহফুজুল বারী সাহেবের পত্রখানা বেশ কয়েকদিন আগে পেয়েছি। এক দুর্ঘটনায় আমার হাতে কষ্ট পাওয়ার দরুন সময় মতো লিখতে পারিনি, আশা করি ত্রুটি নেবেন না।
আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় না থাকলেও আপনি আমার কাছে পরিচিত, আমরা সবাই এক পথের পথিক, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি না ফোটা পর্যন্ত আমরা চলতে থাকবো। কোনো শক্তি কোনো বাধা-বিপত্তি আমাদের গতিরোধ করতে পারবে না। মাজহারুল ইসলাম সাহেবের কাছ থেকে আমাদের এলাকার খবরাখবর অবশ্যই পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই এখানে আমরা কাজ শুরু করেছি। জাতির পিতাকে হত্যা করে সাম্রাজ্যবাদের দালাল খুনি শাসকরা যাতে নিশ্চিন্ত থাকতে না পারে, তার জন্য প্রথম দিন থেকেই কাজ করতে শুরু করেছি। আমাদের বন্ধুরা কে কোথায় আছেন জানতাম না অথচ কে কোন পথ ধরবো তাও আজ জানি না। তাই খুব জোরালোভাবে কাজ করতে পারিনি। এখন যোগাযোগ করা সম্্ভব হয়েছে, এখন একে অন্যের সহযোগিতা ও সমন্বয়ে কাজ করলে জনসাধারণের শত্রু, খুনি সরকার টিকে থাকতে পারবে না, শীঘ্রই পতন ঘটবে আশা করি। সব বন্ধু-বান্ধবকে আমার ও আমার সহকর্মীদের সালাম দেবেন।
শুভেচ্ছান্তে
গাউস খান
(বকুলঃ মোনায়েম সরকার, গাউস খানঃ তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি)
উপসালা, সুইডেন
০৯/০৫/১৯৭৮
সুপ্রিয় বকুল বাবু,
সংগ্রামী শুভেচ্ছা রইলো। আপনার ১২ জুনের চিঠি ১৯ জুন পেয়েছিলাম। বিভিন্ন ব্যস্ততায় উত্তর দিতে এ কয়দিন দেরি হয়ে গেল। চিঠির আগে আপনার পাঠানো বুলেটিন ও বই পেয়েছি। বুলেটিন কপি করে সদস্যদের মাঝে বিলি করা হয়েছে।
লন্ডনে বসবাসকারী বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তেমন একটা সাড়া পাওয়া যায় না। তাদের হতাশা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদর্শগত মতবিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার পরিপন্থী। আমরা লন্ডনে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তবে তেমন ফলপ্রসূ নয়। দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ করে আমাদের সহযোগী বন্ধু ও সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখানে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবো। আমাদের সবচাইতে বড় দুর্বলতা হলো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারা। এখনো আমরা দেশে কারো সঙ্গে নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ করতে পারিনি। বিভিন্ন সময় ফোন করেও বিশেষ ফল হয়নি। তবু আমরা বিদেশি জনমত সৃষ্টির সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভুল করছি না। এখানকার রাজনৈতিক মহলে আমরা ইতোমধ্যেই মোটামুটি প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে দেশে আওয়ামী লীগ কর্তৃক রাজনৈতিক ডিরেকশন নির্ধারণ ও ৭ জুলাই জুলুম প্রতিরোধ ও বন্দি মুক্তির আন্দোলনের ডাক আমাদের নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করেছে। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেশের অবস্থা, বিশেষ করে আমাদের বন্ধুদের ভূমিকা বুঝতে পেরেছি। আওয়ামী লীগ কর্তৃক দ্ব্যর্থহীনভাবে ‘বাকশাল’ কর্মসূচিকে তৎকালীন প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সঠিক বলে ঘোষণা করা আমাদের সব দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে। এবার আমাদের মানা হবে অপ্রতিহত।
আসছে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আমরা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েছি। আমাদের কর্মসূচি সুন্দরভাবে সফল করার জন্য আপনার সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। ১৫ আগস্ট থেকে ৪৮ ঘণ্টা আমরা স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্মুখে অবস্থান ধর্মঘট করব। বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও দেশের রাজনৈতিক দুরবস্থার বর্ণনা করে ৩০ পৃষ্ঠার বুলেটিন ছাপানো হচ্ছে। ছোট হ্যান্ডবিলও বিলি করা হবে। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলোঃ ১৫ আগস্ট থেকে সাত দিনের জন্য আমরা স্টকহোমের কেন্দ্রীয় সাংস্ড়্গৃতিক মিলনায়তনে বাংলাদেশের ওপর রাজনৈতিক প্রদর্শনী করার দুর্লভ অনুমতি পেয়েছি। এই প্রদর্শনীকে সুন্দর ও সার্বিকভাবে সফল করার জন্য আপনার সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন।
প্রদর্শনীযোগ্য উপাদান আমাদের কাছে একেবারেই নেই। যেমন- রাজনৈতিক ছবি, বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ছবি, বিভিন্ন আন্দোলনের ছবি, আন্দোলন দমনমূলক ছবি, মিছিলের ওপর পুলিশ ও মিলিটারি আক্রমণের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের ওপর ছবি- এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারে লন্ডনে আবদুল গাফ্ফার সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজ পর্যন্ত কিছুই পাইনি। আমার বিশ্বাস, আপনি আমাদের এসব ছবি এবং অন্যান্য প্রদর্শনীযোগ্য পোস্টার ও সামগ্রী সরবরাহ করতে পারবেন। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আপনি যতটুকু পারেন তা-ই পাঠিয়ে দিলে অত্যন্ত উপকৃত হবো। আপনার পাঠানো সকল দ্রব্যই আমি আপনার ঠিকানায় ফেরত পাঠিয়ে দেবো। অতিরিক্ত ডাক মাসুলের ক্ষেত্রে আমরা তা পরবর্তীকালে পূরণ করে দিতে পারবো। উপরিউক্ত প্রদর্শনী দ্রব্যাদি বা অন্য কোনো প্রদর্শনীযোগ্য দ্রব্য পাঠাতে পারলে, সত্বর পাঠানোর চেষ্টা করলে সবচেয়ে ভালো হবে।
আমাদের এখানে প্রচারিত সবকিছুই সুইডিশ ভাষায় করা হয়। আমি ওগুলো ইংরেজি অনুবাদ করছি। এক সঙ্গে সবগুলোই আপনার কাছে পাঠাব। জুলাইয়ের শেষে পাঠাতে পারবো বলে আশা করছি।
আপনার সার্বিক সফল কামনায়।
ইতি
কে· এম· কাদের
(বকুল বাবুঃ মোনায়েম সরকার, কে· এম· কাদেরঃ সুইডেনে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত)
ঋৎড়সঃ অনফঁষ এধভভধৎ ঈযড়ঁফযঁৎু
ইধহমষধৎ উধশ ডববশষু
৫৬, গবঃযঁবহ জড়ধফ, ঊফমধিৎব, গরফফষবংবী, ট·ক·
ঞবষঃ ০১-৯৫৬-২১৫৫
উধঃবঃ ২৪·৮·১৯৭৭
প্রীতিভাজনেষু,
আপনার পাঠানো ১৮·৮·৭৭ তারিখের প্রেস রিলিজ পেয়ে অন্ধকারে আলোর আভাস পেয়েছি। গত এপ্রিল মাস থেকে অর্থাৎ ভারতে নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে আমরা- লন্ডনস্থ মুজিব অনুসারীরা কলকাতায় আশ্রয়গ্রহণকারী মুজিবপন্থী নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সকল প্রকার সংযোগ হারিয়ে বলতে গেলে হতাশার অন্ধকারে ডুবতে বসছিলাম। আর্থিক সঙ্কটে ‘বাংলার ডাক’ পরিচালনাও আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে। তথাপি বহু কষ্টে আমরা এখন পর্যন্ত ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের ক্ষীণ দীপশিখা জ্বালিয়ে রেখেছি। এ সময় কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংযোগ সমিতি প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের খবর প্রেস রিলিজ আকারে পাঠানোর ব্যবস্থা আমাদের অত্যন্ত আশান্বিত করে তুলেছে। আপনাদের পাঠানো প্রেস রিলিজ থেকে এখন নিয়মিত বাংলা সাপ্তাহিক ‘বাংলার ডাকে’ এবং ইংরেজি বুলেটিন ‘সানরাইজে’ খবর ছাপানো সম্্ভব হবে।
আগে ‘বাংলার ডাক’ প্রচুর সংখ্যায় কলকাতায় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাঠানো হতো। বর্তমানে আর্থিক সমস্যায় পারা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আপনারা আমাদের কোনো সাহায্য করতে পারবেন কিনা জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। প্রীতি ও শুভেচ্ছা নেবেন। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় বাংলা।
ইতি- আপনাদের
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
(মোনায়েম সরকারকে লেখা কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর চিঠি লন্ডন থেকে)
ঠওঙখঅঞওঙঘ ঙঋ ঐটগঅঘ জওএঐঞঝ
উ অ ণ
চটইখওঈ গঊঊঞওঘএ
ঞযঁৎংফধু, ৩ৎফ ঘড়াবসনবৎঃ ৪ চ·গ· উবঢ়ঁঃু ঝঢ়বধশবৎ ঐধষষ
ঠরঃধষ ইযধর চধঃবষ ঐড়ঁংব, জধভর গধৎম, ঘব িউবষযর
উবধৎ ঋৎরবহফ,
ডব রিষষ ৎবপধষষঃযধঃ ংড়সব বসরবহঃ হধঃরড়হধষ ষবধফবৎং ড়ভ ইধহমষধফবংয বিৎব নৎঁঃধষষু ধংংধংরহধঃবফ রহংরফবঃযব উধপপধ ঈবহঃৎধষ ঔধরষ ড়হ ৩ৎফ ঘড়াবসনবৎ, ১৯৭৫· অসড়হমঃযড়ংব যিড় ভবষষ ারপঃরহংঃড়ঃযরং মৎঁবংড়সব সঁৎফবৎ ধিং ঠরপব-চৎবংরফবহঃ ঝধুবফ ঘধুৎঁষ ওংষধস, গৎ· ঞধলঁফফরহ অযসবফ (চৎরসব গরহরংঃবৎ) গধহংঁৎ অষর ধহফ গৎ· কধসধৎঁুুধসধহ, চৎবংরফবহঃ, অধিসর খবধমঁব·
অ ঢ়ঁনষরপ সববঃঃরহম রিষষ নব যবষফ রহঃযবরৎ সবসড়ৎু ড়হঃযরং ফধু, যিরপয রং নবরহম ড়নংবৎাবফ ধং ঠওঙখঅঞওঙঘ ঙঋ ঐটগঅঘ জওএঐঞঝ উঅণ·
ণড়ঁ ধৎব ৎবয়ঁবংঃবফঃড় শরহফষু ধঃঃবহফঃযরং সববঃরহম ধহফ বীঃবহফ ুড়ঁৎ ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃঃড়ঃযব পধঁংব ড়ভঃযব ফবভবহপব ড়ভ যঁসধহ ৎরমযঃং ধহফঃযব ংঃৎঁমমষব ড়ভঃযব ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ইধহমষধফবংয ভড়ৎঃযব ৎবংঃড়ৎধঃরড়হ ড়ভ ফবসড়পৎধপু·
ঝফ/
১ংঃ ঘড়াবসনবৎ, ১৯৭৭
ঝঁনৎধঃধ ইধহবৎলবব
ঋঙজ ঋজওঊঘউঝ ঙঋ ইঅঘএখঅউঊঝঐ
(ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের উদ্যোগে জনসভার বিজ্ঞপ্তি, সভার আহ্বায়ক, সুব্রত ব্যানার্জি প্রখ্যাত সাংবাদিক)
ঋজওঊঘউঝ ঙঋ ইঅঘএখঅউঊঝঐ
(ঘধঃরড়হধষ চৎবঢ়ধৎধঃড়ৎু ঈড়সসরঃঃবব)
ঘ-৯ ঔধহমঢ়ঁৎধ ঊীঃবহংরড়হ, ঋরৎংঃ ঋষড়ড়ৎ, ঘব িউবষযর ১১০০১৪, ঞবষবঢ়যড়হবঃ ৬২৫৪৪২
গবসনবৎং
ঝৎর গধহসধঃযধ ঘধঃয এঁঢ়ঃধ
চৎড়ভ· উরষরঢ় ঈযধশৎধাধৎঃু, গ·চ·
ঝৎর ঝধপযরহফৎধষধষ ঝরহময, গ·চ·
ঝৎর জ· ক· গরংযৎধ, গ·চ·
ঝৎর ক· জ· এধহবংয
ঝৎর চ· ঘ· ঐধশংধৎ
ঝৎর ঝযধংযর ইযঁংযধহ
ঝৎর এধহবংয ঝযঁশষধ
ঝৎর ঝধফযধহ গঁশবৎলবব
ঝৎর অনধহর খধযরৎর
ঝৎর ঝঁনৎধঃধ ইধহবৎলবব (ঈড়হাবহড়ৎ)
ঝৎর উ· জ· এড়ুধষ
(ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সদস্যবৃন্দ ’৭৫-পরবর্তী প্রতিরোধ আন্দোলনকে সর্বতোভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন)
২৫/১০/১৯৭৮
উবধৎ ইধশঁষ,
জবপবরাবফ ুড়ঁৎং ফঃ· ২২/১০ ধহফ হড়ঃবফঃযধঃ ুড়ঁ ধৎব পড়সরহম ড়হ ১ংঃ ঘড়াবসনবৎ· অং ওঃড়ষফ ুড়ঁ বধৎষরবৎ ফড় হড়ঃ বীঢ়বপঃ ধহু হড়ঃধনষব ংঁপপবংং ড়ভঃযব ঢ়ৎড়মৎধসসব ভড়ৎ ৩ৎফ ঘড়াবসনবৎ রভ হড় নড়ফু রংঃধশরহমঃযব ৎবংঢ়ড়হংরনরষরঃুঃড় ড়ৎমধহরুবঃযবঃযরহম ংবৎরড়ঁংষু· ও ধস মড়রহম ড়ঁঃ ড়ভ উবষযর ঃড়সড়ৎৎড় িভড়ৎ ৪ ফধুং ধহফ ংযধষষ ৎবঃঁৎহ নধপশ ড়হ ৩১ংঃ· উধু ফড়হ্থঃ ফবঢ়বহফ ড়হ সব রহ ধহু ধিু বীপবঢ়ঃ ধঃঃবহফরহমঃযব সববঃরহম রহ পধংব ও ধস রহ উবষযর·
ঞযবঃধংশ ড়ভ ড়ৎমধহরুরহমঃযব সববঃরহম,ঃধশরহম ঁঢ়ঃযব হধসবং ড়ভঃযব ঢ়ধৎষরধসবহঃধৎু পড়সসরঃঃবব বঃপ· ৎবয়ঁরৎবং ষড়ঃ ড়ভ ড়িৎশ, যিরপয সঁংঃ নব ঁহফবৎঃধশবহ নু ুড়ঁ, ড়ৎ ধহু ড়ঃযবৎ ভৎরবহফ ড়ভ ুড়ঁৎংবষভ·
ও ংযধষষ যবষঢ় ুড়ঁ ধং ভধৎ ধং ঢ়ড়ংংরনষব·
ডরঃয ংরহপবৎব ভধরঃযভঁষষু
অনধহর খধযরৎু
(বকুলঃ মোনায়েম সরকারকে লেখা অবনী লাহিড়ী, এম·পি-র চিঠি)
২১/১২/১৯৭৮
গু ফবধৎ ইধশঁষ,
ও যধাব নববহ সরংবৎধনষব, ঢ়যুংরপধষষু ধহফ সবহঃধষষু· গু হড়ঃ ৎবঢ়ষুরহমঃড় ুড়ঁ বধৎষরবৎ সধফব রঃ ড়হষু ড়িৎংব·
অভঃবৎ ধ ভব িধঃঃবসঢ়ঃং ও পড়ঁষফ সববঃ গরড়যৎঃড় ফধু· ঐব ধিং নঁংু নঁঃ ও পড়ঁষফঃধষশঃড় যরস ধভঃবৎ ধিরঃরহম ধহ যড়ঁৎ·
ঐব সধু হড়ঃ নব রহ উবষযর ড়হ ২৬· ইঁঃ যব রিষষ নব ষড়ড়শরহম ধ ৎড়ড়স ভড়ৎ ুড়ঁ রহ ডবংঃবৎহ পড়ঁৎঃ· ও ংযধষষ নব ংববরহম যরসঃড়সধৎৎড়·ি
উবংঢ়রঃবঃড়ি ধঃঃবসঢ়ঃং ও পড়ঁষফ হড়ঃ ংবব ঝঁনৎধঃধ ইধহবৎলবব·
ওভ ুড়ঁৎঃৎধরহ ধৎৎরাবং নবভড়ৎব, ও ংযধষষঃৎুঃড় ংবব ুড়ঁ ধঃঃযব ংঃধঃরড়হ· অং রষষ-ষঁপশ ড়িঁষফ যধরৎু রঃ· ইধনু রং ষবধারহম ড়হ উবপবসনবৎ ২৬·
ও, ও ফড়হ্থঃ পড়সবঃড়ঃযব ংঃধঃরড়হ, ুড়ঁ ংযড়ঁষফ ঢ়ড়হফড়হ ড়হ যবৎ·
ও ংযধষষ পড়সব নধপশ যড়সব রসসবফরধঃবষু ধভঃবৎ ংববরহম ইধনু ড়ভভ· ওহ ধহু পধংব বি পধহ সববঃ ধৎড়ঁহফ ৫ চগ· ঞযব ভষরমযঃ ষবধাবং ধঃ ৩·
ডরঃয নবংঃ রিংযবং ্ ধিৎসবংঃ ৎবমধৎফং·
ণড়ঁৎং ংরহপবৎবষু
অ খ কযধঃরন
ও ংযধষষ ংবহফ ুড়ঁ ধঃবষবমৎধস·
(বকুলঃ মোনায়েম সরকারকে লেখা মর্নিং নিউজের প্রাক্তন সাংবাদিক মারাঠিভাষী এ·এল· খতিবের চিঠি, (‘ডযড় শরষষ গঁলরন’ বইয়ের লেখক)। বঙ্গবন্ধুর মৃতুøর পর তিনি আর ঢাকায় ফিরে আসেননি। এই বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু-প্রেমিক মানুষটি পরে দিল্লিতেই শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন)
আ·হ· সেলিম তালুকদার
শিলিগুড়ি
শ্রদ্ধেয় মোনায়েম ভাই,
আমার বিপ্লবী সালাম নেবেন। আশা করি পরম করুণাময়ের কৃপায় ভালো আছেন।
আমরা গত ২৩ তারিখে শিলিগুড়ি ভালোভাবেই এসে পৌঁছেছি। এসে অবশ্য আপনার কথামতো চলার চেষ্টা করছি সাধ্যমতো, বাদবাকি খোদা ভরসা। একেবারে বসে থাকতে আর মন চায় না। কাজের অভাবে পঙ্গু হয়ে গেলাম। শরীর দিন দিনই অলস হয়ে যাচ্ছে, বাত ধরার উপক্রম হয়েছে, কি যে হয় তা-ই ভাবছি।
ভাই, আপনার সঙ্গে কথোপকথনের পর আর কিছু না হোক মানসিক শান্তি ফিরে পেয়েছি। কারণ আপনার উপদেশগুলো খুবই ভালো লেগেছে। কলকাতায় আমাদের অনেক লোকই তো আছে কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো তাদের কারো কাছ থেকে এতটুকুও পেলাম না। তাদের ভাব দেখে মনে হলো, অন্যেরা কাজ জোগাড় করে তাদের উচ্চ আসনে বসাবে আর তারা সেই আসনে বসে হুকুম দেবেন। অথচ জাতির এই অন্তিমলগ্নে আমাদের সবারই যে ত্যাগ করা উচিত তা তারা কখনো ভাবেন কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। আপনি একবার ভেবে দেখুন আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর দেশ, আপনজন সবকিছু ছেড়ে ভারতের মাটিতে আশ্রয় নিয়েছি, তারা কয়জন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকতায় এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করার মানসিকতা নিয়ে এসেছি? নাকি জীবনের নিরাপত্তা হেতু এসেছি। যদি ধরি আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্যেই এসেছি, তাহলে আজ আমাদের সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে একই কাতারে বুকে বুক মিলিয়ে কাজ করা উচিত নয় কি?
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপর্যয় একদিকে মঙ্গলই হয়েছে। তার কারণ, আমরা আমাদের স্বাধীনতা যদি ৯ মাসে না পেয়ে ৯ বছর যুদ্ধ এবং ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে পেতাম, তাহলেই আমরা বুঝতাম স্বাধীনতার মর্ম এবং তার মর্যাদা। আর তাহলেই আমরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিকতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই আত্মনিয়োগ করতাম দেশ ও মাতৃকার কাজে এবং সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে। তাহলেই আমরা আমাদের দেশের মঙ্গল করতে পারতাম এবং তখন অমঙ্গল আমাদের এত তাড়াতাড়ি স্পর্শ করতে পারতো না। তাই তেমনি আজও যদি আমাদের এই বিপর্যয় না আসতো, তাহলে আগামীতে দেশ গড়ার বা দেশ উন্নয়নের নামে শুধু ধ্বংসই ডেকে আনতাম। আর নেতৃত্বের তাগিদে শুধু রক্তের বন্যাই বইতো। তাই তো আমি মনে করি, আজ দুঃখ-কষ্ট করে যদি আগামীতে যেতে পারি, তাহলে মর্যাদা দিতে পারবো। আপনাকে আমি বলেছি, যেহেতু সংগ্রাম বা বিপ্লবে যোগ দিতে এসেই আমার জন্ম হয়েছে, সেহেতু বাদবাকি জীবন ভুখা-নাঙ্গা মানুষের মুক্তির জন্যে সংগ্রাম করেই যাবো। আমি জানি, এ পথ অতীব কণ্টকাকীর্ণ। তবু আমি মনে করি, বন্ধুদের মনোভাব, মন-মানসিকতা যদি অটুট থাকে এবং লোভ-লালসাকে যদি পরিত্যাগ করে নিজেদের শুদ্ধ করে কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারি, তাহলে সাম্রাজ্যবাদী তো দূরের কথা, পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই আমাদের পিছু হটাতে পারবে। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আপনার সাহচার্যই আমাদের দিন দিন এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের লক্ষ্যস্থলে। তবে আমি কথায় নয়, আগামীতে কাজে তা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে চাই যে নিজে ভোগ করতে আনন্দ- নাকি সবাইকে নিয়েই আনন্দ।
আমি জানি, যেহেতু পরিচয় নেই বা বিগত দিনে একত্রে কাজের অভিজ্ঞতা নেই এবং আমার মন ও মানসিকতা সম্পর্কে আপনি অজ্ঞাত, সেহেতু প্রথমত বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিন্তু আমি আপনাকে এটুকু আশ্বাস দিতে পারি যদি কাজ করেন, দেখবেন সেদিন যে কি আনন্দ পান। আপনি আপনার চিন্তা-ভাবনায় কাজ চালিয়ে যান। আমাদের প্রতি যখন যা নির্দেশ থাকে পাঠাবেন তাহলেই হবে। তবে জীবনে আর মরীচিকার পিছু নিতে রাজি নই। আপনার সুদক্ষ নেতৃত্ব আমাকে মানুষ করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে আমি মনে করি, যেহেতু আমাদের লক্ষ্যস্থল ঢাকা সেহেতু কাউকে যদি ময়মনসিংহ, পাবনা, রংপুর বা টাঙ্গাইল যাওয়ার যাত্রী পাই, তাহলে তাদের আমাদের সঙ্গে নেয়াই ভালো বলে আমি মনে করি। তবে এটাও আবার ঠিক, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ, তাই আপনিই চিন্তা করবেন। আমার সীমিত বিদ্যায় আপনাকে কিছু উপদেশমূলক বলা আর পাগলের প্রলাপ একই কথা বলে আমি মনে করি। তবে আমাকে যদি যুদ্ধের ব্যাপারে বলতে বা করতে বলতেন, তাহলে চেষ্টা করে দেখতাম। আপনাকে বলেছিলাম যে সব কূল রক্ষা করে আপনি কাজ করতে পারবেন না এবং তা সম্্ভবও নয়। তাই যাদের দ্বারা সম্্ভব তাদের বেছে নিয়ে কাজ চালিয়ে যান এই আমার আপনার প্রতি অনুরোধ। ভাই, আমরা কর্মী, তাই আপনাদের কাছে কাজ চাই। নেতা হওয়ার খায়েশ আজও হয়নি, তাছাড়া আমাদের বয়সই হয়নি। আর আপনি দিল্লি থেকে ঘুরে এসে সেখানকার বর্তমান মনোভাব অবশ্য অবশ্যই জানাবেন। এই আমার অনুরোধ। কারণ খুবই মানসিক অশান্তিতে আছি। আমার কাঁচা হাতের লেখা ছোট ভাই মনে করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন- এই আমার অনুরোধ।
পরিশেষে আপনার পরিশ্রম সার্থক হোক এবং শারীরিক মঙ্গল কামনা করেই শেষ করছি।
ইতি- আপনার ছোট ভাই
আ· হ· সেলিম তালুকদার
(মোনায়েম ভাইঃ মোনায়েম সরকার, আ· হ· সেলিম তালুকদারঃ জনৈক প্রতিরোধ সংগ্রামী)
Leave a Reply