List

পৃথিবী এখন নানা কারণেই উত্তপ্ত। দেশে দেশে হানাহানি, রক্তপাত, মৌলবাদী-গোষ্ঠীর নির্বিচার নরহত্যা-পৃথিবীকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। একবিংশ শতাব্দীর এই উৎকর্ষের মুহূর্তে পৃথিবীর এই রক্তাক্ত অবয়ব আমরা কেউই দেখতে চাই না। অথচ আজ আমাদের এই রক্তঝরা দৃশ্যই বার বার দেখতে হচ্ছে। কেন মানুষ পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, কি কারণে পৃথিবীকে স্বর্গ না বানিয়ে আমরা নরক বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত সেই বিষয়গুলো আজ আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার।
বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালে দেখতে পাই পৃথিবী আজ ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছে। ‘ক্রান্তিকাল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলোÑ ‘অবস্থা পরিবর্তনের সময়’। পৃথিবী এখন যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থা বিন্দু থেকে বাঁক পরিবর্তনের সময় এসেছে। পৃথিবীর এই বাঁকবদল এখন বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে নাকি পৃথিবীকে বিনষ্ট করবেÑ সেই শঙ্কা আজ পৃথিবীর সকল শান্তিকামী মানুষকেই ভাবিয়ে তুলছে। যারা শান্তির সপক্ষে দ-ায়মান, তারা জোর দাবি তুলছে কল্যাণকর চিন্তাই হোক পৃথিবীবাসীর লক্ষ্যবিন্দু, কিন্তু যারা পুঁজির পূজারী তারা চাচ্ছে ঠিক এর উল্টোটা। কল্যাণ এবং অকল্যাণের এই দ্বন্দ্বই আজ পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। মানুষের মনে যদি শুভভাবের উদয় না হয়, মানুষ যদি মানুষের জন্য আন্তরিক না হয়, তাহলে মানুষের পৃথিবী আর বাসযোগ্য থাকবে না। এই পৃথিবী দ্রুতই ধ্বংস হবে। ছারখার হয়ে যাবে মানুষের সকল আশা-ভরসা। আজ পৃথিবীর সকল মানুষকেই এই বিষয়টি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে হবে। আজ একমাত্র মানবপ্রেমী ভাবনাই মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এ ছাড়া আর কোনো কিছুই অনাগত বিনাশ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে না।
পৃথিবীর বৃহৎ পরিবর্তন একদিনে বা এক মুহূর্তেই লক্ষ্য করা যায় না। যেকোনো দৃশ্যমান পরিবর্তনই সময় সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য বিষয়। দৃশ্যমান পরিবর্তনের জন্য কখনো কখনো শতাব্দীকাল পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়। আজ একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা পৃথিবীর যে চেহারা দেখতে পাচ্ছি এই রূপে পৃথিবীকে সাজাতে অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছে মানুষ। বিসর্জন না দিলে অর্জনের গৌরব অনুভব করা যায় না। আজ আমরা পৃথিবীবাসী এমন এক মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছি যে মুহূর্তে এসে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছি আমাদের ভবিষ্যৎ কী? কোন পথে যাত্রা করছি সমগ্র মানবসমাজ? নিশ্চয় এই সময়ে এই নেতিবাচক শঙ্কা আমাদের মধ্যে থাকার কথা ছিল নাÑ অথচ কি আশ্চর্য আজ দুনিয়ার সব মানুষকেই এই নেতিবাচক ভাবনা দারুণ এক সংকটের মধ্যে নিপতিত করেছে।
গত শতাব্দীগুলোতে মানুষ যেসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় মনুষ্যসমাজের সামাজিক স্তরবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন। দাসপ্রথা থেকে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় আসতে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে মানুষকে। আবার এর মধ্যেই চলেছে গোত্রযুদ্ধ, ধর্মযুদ্ধ। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার ধর্মযুদ্ধ লেগেছে। সেসব যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে কোটি কোটি নিরপরাধ মানুষ। এরপরে দুই দুইটি বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে করেছে রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত। এছাড়া স্বাধীনতাকামী মানুষের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিনের সংগ্রাম তো ছিলই। অতীত দিনের যেসব রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে মানুষ এগিয়েছে সেসবই আজ আবার ভয়াল রূপ নিয়ে মানুষের সামনে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।
পৃথিবীর মানুষ আজ ধনের কাছে, ক্ষমতার কাছে, লোভের কাছে এতটাই নতজানু হয়ে পড়েছে যে এসব থেকে কিছুতেই নিজেকে দূরে সরাতে পারছে না। কথায় আছে ‘লোভের ফলে পাপ হয়, পাপের ফলে মৃত্যু হয়।’ আজ পৃথিবীর মানুষ যেন বহু শতাব্দী ধরে চলমান এই মহৎ সত্যবাণীকে স্বেচ্ছায় অস্বীকার করে মৃত্যুর দিকে যাত্রা শুরু করেছে। এখন আবার দাস যুগে, ক্রসেডের যুগে ফিরে গেলে পৃথিবীর কি মঙ্গল হবে? আবার যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয়, তাহলে কি সুখে থাকবে পৃথিবীর মানুষ?
যে পরিস্থিতিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ লেগেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সে পরিস্থিতি ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুগে পৃথিবীতে তেমন কোনো আধুনিক মারণাস্ত্র ব্যবহৃত হয়নি। তাই অল্প ক্ষতিতেই শেষ হয়েছে সেই মহারণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার করা হয়। ‘লিটল বয়’ আর ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে যে দুটি বোমা আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, সে দুটি বোমা সেদিন জীবন ও পরিবেশের যে ক্ষতি সাধন করেছিল ইতিহাস তার স্বাক্ষী আছে।
১৯৪৫ সালের মারণাস্ত্রের চেয়ে আজ পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো আরো অনেক উন্নত ও শক্তিশালী মারণাস্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। এমন মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পৃথিবী যে তার অস্তিত্ব হারাবে এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। পৃথিবীতে অস্ত্রব্যবসা আজ পুঁজিবৃদ্ধির প্রধান উৎসে পরিণত হয়েছে। এই অস্ত্র ব্যবসা রমরমা রাখার জন্য দেশে দেশে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার পাঁয়তারা করছে অস্ত্র-উৎপাদনকারী দেশগুলো। এর ফলে সাম্প্রদায়িকতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্মীয় সন্ত্রাস। আজ মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বোকো হারাম, আলকায়েদা, আইএস, হিজবুল্লাহদের নরঘাতী তা-ব। যে তা-বে জ্বলে পুড়ে মরছে ইরাক, সিরায়া, মিশর, লেবানন, ইয়েমেনের মতো রাষ্ট্র। ধ্বংস হচ্ছে প্রাচীন সভ্যতার সব মূল্যবান নির্দশন। ইহুদিরা যেমন উড়ে এসে ফিলিস্তিনের উপর জুড়ে বসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে, তদ্রƒপ ভারতের হিন্দু ও মিয়ানমারের বৌদ্ধরাও লিপ্ত হচ্ছে ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতায়। যখন পুরো পৃথিবীর যাত্রা শুরু করার কথা ছিল একটি সুন্দর আগামীর দিকে, যখন পৃথিবীর সবমানুষেরই আসা দরকার ঐক্য ও শান্তির এক পতাকাতলে, তখনি আমরা জড়িয়ে পড়ছি বিভেদের বৈরিতায়। ‘একতায় উত্থান বিভেদে পতন’ জেনেও কেন পৃথিবীর মানুষ আজ এত আত্মকলহে লিপ্ত এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা আজ সময়ের দাবি। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে না পারলে কিছুতেই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যাবে না পৃথিবী ও মানবসভ্যতা।
হিংসা দিয়ে হিংসাকে ধ্বংস করা যায় না। আজ হিংসার পরিবর্তে প্রেম বিলাবার সময় এসেছে। ধনী রাষ্ট্রগুলোর উপর নৈতিক দায় বর্তেছে গরিব রাষ্ট্রগুলোকে সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া। বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খেতে পারে, বৃহৎ হিং¯্র বন্য পশু নির্বিচারে হত্যা করতে পারে বনের অন্য নিরীহ পশুকে। কিন্তু মানব সমাজে এই পশুনীতি একেবারেই অচল। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, সেবাশুশ্রƒষা দিয়ে নিরাপদ রাখবে এটাই মানুষের ধর্ম। শক্তিমান রাষ্ট্রগুলোর আজ একান্ত উচিত গরিব রাষ্ট্রগুলোর পাশে মানবিক সাহায্য নিয়ে নিঃশর্তে দাঁড়ানো। শাসন-শোষণ যুদ্ধ পরিহার করে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর উচিত মানবসেবার চিন্তা লালন করা। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সব মানুষকেই তার মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ধনবৈষম্য নয়, ধনসাম্য রক্ষা করতে হবে। অস্ত্রনির্ভর বাণিজ্য ও ভূ-রাজনীতির আধিপত্য থেকে মুক্ত হতে হবে।
জড় পৃথিবীর সাধ্য নেই জীবন ও পরিবেশের জন্য কল্যাণকর কোনো সমাধান দেওয়া যদি পৃথিবীর মানুষ কল্যাণের দিকে এগিয়ে না যায়। আমরা মানুষেরা আবার কি আদিম অসভ্য সমাজে ফিরে যেতে চাই? আমরা কি জড়িয়ে পড়তে চাই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় ধর্মযুদ্ধে? আমরা কি ঠুনকো কোনো বিষয় নিয়ে বাঁধিয়ে দিতে চাই সর্বগ্রাসী তৃতীয় মহাযুদ্ধ? এসব আজ ঠা-া মাথায় ভেবে দেখা দরকার। আমাদের পূর্বপুুরুষেরা যে সীমাহীন ত্যাগ ও সংগ্রাম করে আজ আমাদের এইখানে পৌঁছে দিয়েছে সে ত্যাগ ও সংগ্রামকে আমরা বিফলে যেতে দিতে পারি না। আজ ধ্বংসের জন্য নয়, সৃষ্টির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। লোভ ও লাভের চিন্তা বলি দিতে হবে। শুধু মুনাফা নয়, মানুষের কল্যাণের দিকেই এখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে যাত্রা করতে হবে। ধ্বংস নয়, সৃষ্টির দিকে যাত্রা করুক আমাদের প্রিয় পৃথিবী। আজ আমাদের অঙ্গীকার হোকÑ
‘যখন প্রশ্ন উঠবে যুদ্ধ না শান্তি?
আমরা জবাব দেবো শান্তি, শান্তি, শান্তি।’
০৩ এপ্রিল, ২০১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 9 10 11 12
May 7th, 2016

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : ইউনোস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবি

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : ইউনোস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবি মোনায়েম সরকার রাজা পূজিত হন স্বদেশে কিন্তু পণ্ডিত সম্মান পায় […]

May 6th, 2016

যুগে যুগে সমাজ বিবর্তনের ধারায় শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা

পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রীদের যখন সোনালি দিন ছিল, তখন মে দিবস উদযাপিত হতো অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে। মস্কোর রেড স্কোয়ারে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আর […]

June 25th, 2015

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভুøদয়

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভুøদয় অধ্যাপক সালাহ্‌উদ্দীন আহ্‌মদ ভূগোল ও ইতিহাস বাংলাদেশকে একটি স্বতন্ত্রভূমি […]

June 25th, 2015

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পঞ্চম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে পঞ্চম স্মারক বক্তৃতা ২০১০, ২৭ জানুয়ারি

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পঞ্চম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে  পঞ্চম স্মারক বক্তৃতা ২০১০ ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর দিন বদলের অঙ্গীকারের […]

June 25th, 2015

Shah A M S Kibria 6th Memorial Lecture

Shah A M S Kibria 6th Memorial Lecture 25 January 2011 Bangladesh National Museum MICROCREDIT: A PANACEA OR A VILLAIN Introduction […]

June 24th, 2015

International Terrorism: Bangladesh Context

  Seminar Paper 8 December 2004 at CIRDAP auditorium International Terrorism: Bangladesh Context C M Shafi Sami   Introduction Historically […]

June 24th, 2015

কিবরিয়া স্মারক বক্তৃতা-২০০৯-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ড· মো· আনোয়ার হোসেন ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ […]

June 24th, 2015

স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতাঃ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু দ্বারভাঙ্গা হল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতাঃ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু দ্বারভাঙ্গা হল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সমবেত সুধীমন্ডলী, […]

June 24th, 2015

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা-২৫ আগস্ট ২০১২-বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশে সমাজ বিবর্তন ও রাজনীতির ধারা – মইনুল ইসলাম সুধীমণ্ডলী, বক্তৃতার শুরুতেই আমি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা […]

June 20th, 2015

১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পি·এন· হাকসারের লেখা কয়েকটি চিঠি

১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পি·এন· হাকসারের লেখা কয়েকটি চিঠি                           […]