List

ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আওয়ামী লীগকে উজান পথেই এগিয়ে যেতে হবে

মোনায়েম সরকার
বঙ্গীয় ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটাতে প্রথম যে দল জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায়, তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর দল গঠিত হওয়ার মুহূর্তের আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই এক নয়। সময়ের ব্যবধানের সঙ্গে সঙ্গে দলের অনেক কিছুই বদলেছে অথবা বদলাতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন পূর্ববঙ্গে গঠিত হয়, গঠনকালীনই তা বৃহৎ দল হিসাবে পরিচিত ছিল। আজকের বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগ সর্ববৃহৎ দল। কিন্তু এই সর্ববৃহৎ দলের ট্র্যাজেডিও অনেক বড়, অনেক বেশি নির্মম। ইতিহাসের অসংখ্য রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ঠিকই, তবে এজন্য আওয়ামী লীগের শরীর থেকেও কম রক্ত ঝরেনি। বলতে গেলে এটাই সত্য যে, শুরুর দিকে যারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারাই দেশ স্বাধীনের সময় সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তারা প্রায় সকলেই নিজের বুকের রক্ত দিয়ে স্বদেশকে স্বাধীন করার খেসারত দিয়ে গেছেন। পৃথিবীর কোনো দেশের একটি রাজনৈতিক দল এত ভাঙাগড়া-দলন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে টিকে আছে কি না, তা আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগের টিকে থাকার কারণ তার আদর্শবাদ ও সাংগঠনিক শক্তি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববতী ও পরবর্তী আর কোনো দল বাংলাদেশে নেই, যার ভূমিকা আওয়ামী লীগের মতো এত সাহসী ও নির্ভীক। শুধু সাহসিকতা আর নির্ভীকতাই নয়, আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, ধর্মনিরপেক্ষতায়, শোষণহীন সমাজব্যবস্থায়। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দলই এই তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য মনে প্রাণে ধারণ করে না। তাই ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন তারিখে ঢাকার রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়েও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আটষট্টি বছর অতিক্রম করছে এই দল।
বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তা কল্পনারও বাইরে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। তাছাড়া দলটি গত নয় বছরে বেশকিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, নয় বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা (বর্তমানে যা ৭.১১ শতাংশ), বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মানই তার প্রামাণিক স্বাক্ষর বহন করে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এর আগে কখনো এমন সুসময় পার করেছে বলে ইতিহাসে নজির নেই। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার এখন ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৪ শতাংশ। বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩১.৩২ বিলিয়ন ডলার। এই সরকারের আমলে দেশে-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা, আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাসহ অসংখ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ, উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। সড়ক, নৌ, রেল, বিমানসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান সত্য। আগে বাংলাদেশের মানুষও নানাবিধ রোগ-শোকে অকালে মৃত্যুবরণ করতোÑ বর্তমান সরকারের আমলে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নই হয়নি, মানুষের গড়-আয়ুও বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর ৬ মাসে দাঁড়িয়েছে। এখন এদেশে পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর ৩ মাস আর মহিলাদের গড় আয়ু ৭২ বছর ৯ মাস। বিশ্বে বর্তমান গড় আয়ু ৭১ বছর ৪ মাস। সেই তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ২ মাস বেশি। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য ইতিবাচক সংবাদ (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ এপ্রিল, ২০১৭)।
পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে-সেখানে বোমা হামলা হতো, এমনকি ৬৩টি জেলায়ও একসঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসাবে গড়তে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বে থাকতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধান আওয়ামী লীগের হাতেই রচিত হয়েছিল। ওই সংবিধানই বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। শেখ হাসিনা সরকারকে সংবিধান পদ্ধতিতেই বাংলাদেশকে শাসন করতে হবে। তাহলে সমস্ত উন্নয়নই টেকসই হবে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মান্ধ ও রক্ষণশীল মুসলিম দেশগুলোর ভাগ্যই বরণ করতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ মূলত আওয়ামী লীগের হাতেই। যখনই বাংলাদেশের মাটিতে ঘাতকচক্র ও বিরোধী শিবিরের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়েছে তখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম
অশান্তি কিংবা সামরিক থাবা। বাংলাদেশের জন্য লড়েছে আওয়ামী লীগ, বর্তমানে দেশও গড়ছে আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও আত্মসমীক্ষার মুখোমুখি হওয়া দরকার। দল এখন ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে কিন্তু পর্যবেক্ষণ শক্তি কমে। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে অতুলনীয় নেত্রী। তিনি একাই আওয়ামী লীগের ভার বহন করতে সক্ষম। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা যতই ক্লিন ইমেজ তৈরি করুন না কেন যদি তার দলীয় লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, দলীয় নীতি বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে সামনে ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। অনেক নেতারই মাঠে জনপ্রিয়তা নেই, অনেকেই এলাকায় তেমন কোনো কাজ করছেন না, অনেকেই শুধু ধান্ধায় আছেন কীভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বানাবেন ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হবেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই সীমাহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ আছে। কারো কারো কার্যকলাপে প্রশ্রয় পাচ্ছে সন্ত্রাস। এগুলো জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছায়। এই বিষয়ে অবশ্যই সভানেত্রীর সুদৃষ্টি থাকা দরকার। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমনকি পৌরসভার নির্বাচনেও কোনো কোনো নেতা দলীয় প্রতীক নৌকা টাকার বিনিময়ে বিএনপি ও জামায়াতি লোকের হাতে তুলে দিয়েছে। এসব নির্বাচন বাণিজ্যে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাপট লক্ষণীয়। তাদের ঘুষ-দুর্নীতির কথাও মাঝে মাঝে প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকায়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে এসব অপকর্ম পরিহার করে মুজিব আদর্শ প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যেতে হবে।
দেশ-জনগণ ও দলীয় স্বার্থে এখনই আওয়ামী লীগারদের সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে আগামী নির্বাচনে দলের ভাগ্যে কী হবে, কেউ বলতে পারে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পুলিশের উৎপাত বাংলাদেশের মানুষকে ভীষণ ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সীমাহীন দুর্নীতি ও অকারণ হয়রানি জনমনে ভীষণ ভীতি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে ভবিষ্যতে দল গর্তে পড়তে পারে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আরও কন্ট্রোল করা দরকার। এদের বিরুদ্ধে মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত নয় বছরে এই তিন সংগঠনের কোনো ভালো কাজের দৃষ্টান্ত আছে কিনা সন্দেহ। তবে তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ তৈরি হয়েছে জনমনে। দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে, যারা দলের সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করবে, তাদের দলে না রাখাই সমীচীন হবে। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দেওয়ার মুহূর্তে তাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে, যাদের বিজয়ে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকবে না। এজন্য অবশ্য দলীয় প্রধানকে একটু কঠোর হতে হবে। আমি জানি, যিনি এখন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, তিনি অতটুকু কঠোর হওয়ার মানসিকতা পোষণ করেন।
ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বিশ্বের সেরা ৪৪টি বক্তৃতা নিয়ে জেকব এফ ফিল্ড যে বক্তৃতা সংকলন বের করেছেন, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতা স্থান পেয়েছে। জেকব তাঁর সংকলনের নাম দিয়েছিলেন চার্চিলের বক্তৃতার অংশ থেকে We shall fight on the Beaches (The speeches that inspired History)। অসম্ভব জনপ্রিয় সেই চার্চিলও নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছিল। সে কথা মনে রেখে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দল ও সরকার পরিচালনা করতে হবে। দীর্ঘ তেইশ বছর সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যেভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হিসাবে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়েছিলেন ঠিক সেই জায়গায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যেতে হবে। মৌলবাদী ও পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে মানুষের ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মাঝে অনেক আশা তৈরি হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এজন্যই রাজপথে বিরোধী দলের মিছিল-মিটিং জনশূন্য। কেউ আর অকারণে রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না। এটা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যদি কোনো কারণে বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার সব উন্নয়ন সূচক হারাবে ঠিকই, কিন্তু আওয়ামী লীগ হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সব দিক সামাল দিয়ে এখন ঠান্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সেখানে নিতে গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি সঠিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এজন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদে সৎ, ত্যাগী ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য মন্ত্রীদের মন্ত্রিপরিষদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং যথাসম্ভব ছোট আকারে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে হবে। নির্বাচনে প্রতি আসনে বিজয় প্রত্যাশী একক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। বিদ্রোহী প্রার্থী যাতে না হতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিতর্কিত প্রার্থীকে কোনো ভাবেই মনোনয়ন দেয়া সমীচীন হবে না।
আমি একসময় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, এখন নেই। স্বেচ্ছায় প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও পরোক্ষ রাজনীতির সঙ্গে এখনও কিছুটা সম্পৃক্ত আছি। বর্তমান বাংলাদেশে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী ও নীতিভ্রষ্ট রাজনীতিবিদরা ‘তৃতীয় ধারা’র নামে যে জিকির তুলছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। ঘরে-বাইরে আওয়ামী লীগের শত্রুর কোনো অভাব নেই। অতীতেও আওয়ামী লীগের শত্রু ছিল, বর্তমানেও শত্রু আছে- এসব চিহ্নিত এবং ছদ্মবেশী শত্রুদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে সাবধান থাকতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মুখ থুবড়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের নীলনকশা বাস্তবায়ন হলে আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যেতো বাংলাদেশ। এ দেশে আর আর যেন আগস্ট ট্র্যাজেডি সংঘঠিত না হয়, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ করবো- আপনারা আত্মকলহ না করে ঐক্যবদ্ধ হোন। আওয়ামী লীগের বিজয় মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের বিজয়। আমরা যদি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তস্নাত বাংলাদেশকে ধর্মান্ধ তালেবানি রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে না চাই- তাহলে অবশ্যই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আগামী দিনেও সরকার গঠন করতে হবে। এই কাজ যত কঠিনই হোক- এই কঠিক কাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পন্ন করতে হবেই। আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই উজান পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলেছে- তার ক্লান্তিহীন যাত্রা যতদিন চলবে, ততদিন সকল রকম ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আওয়ামী লীগকে উজান পথেই এগিয়ে যেতে হবে।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
২৫ আগস্ট, ২০১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 9 10 11 12
May 7th, 2016

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : ইউনোস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবি

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : ইউনোস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্তির দাবি মোনায়েম সরকার রাজা পূজিত হন স্বদেশে কিন্তু পণ্ডিত সম্মান পায় […]

May 6th, 2016

যুগে যুগে সমাজ বিবর্তনের ধারায় শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা

পৃথিবীতে সমাজতন্ত্রীদের যখন সোনালি দিন ছিল, তখন মে দিবস উদযাপিত হতো অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে। মস্কোর রেড স্কোয়ারে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আর […]

June 25th, 2015

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভুøদয়

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভুøদয় অধ্যাপক সালাহ্‌উদ্দীন আহ্‌মদ ভূগোল ও ইতিহাস বাংলাদেশকে একটি স্বতন্ত্রভূমি […]

June 25th, 2015

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পঞ্চম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে পঞ্চম স্মারক বক্তৃতা ২০১০, ২৭ জানুয়ারি

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার পঞ্চম মৃতুবার্ষিকী উপলক্ষে  পঞ্চম স্মারক বক্তৃতা ২০১০ ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর দিন বদলের অঙ্গীকারের […]

June 25th, 2015

Shah A M S Kibria 6th Memorial Lecture

Shah A M S Kibria 6th Memorial Lecture 25 January 2011 Bangladesh National Museum MICROCREDIT: A PANACEA OR A VILLAIN Introduction […]

June 24th, 2015

International Terrorism: Bangladesh Context

  Seminar Paper 8 December 2004 at CIRDAP auditorium International Terrorism: Bangladesh Context C M Shafi Sami   Introduction Historically […]

June 24th, 2015

কিবরিয়া স্মারক বক্তৃতা-২০০৯-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ড· মো· আনোয়ার হোসেন ১৯৭০-এর নির্বাচনের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ […]

June 24th, 2015

স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতাঃ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু দ্বারভাঙ্গা হল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্মারক বক্তৃতা বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতাঃ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু দ্বারভাঙ্গা হল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২ বাঙালিশ্রেষ্ঠ বঙ্গবন্ধু শ্রদ্ধেয় সভাপতি, সমবেত সুধীমন্ডলী, […]

June 24th, 2015

বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা-২৫ আগস্ট ২০১২-বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশে সমাজ বিবর্তন ও রাজনীতির ধারা – মইনুল ইসলাম সুধীমণ্ডলী, বক্তৃতার শুরুতেই আমি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা […]

June 20th, 2015

১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পি·এন· হাকসারের লেখা কয়েকটি চিঠি

১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পি·এন· হাকসারের লেখা কয়েকটি চিঠি                           […]