যেসব কারণে আওয়ামী লীগের জয় অবশ্যম্ভাবী
মোনায়েম সরকার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল কি হবে এটা নিয়ে এখনই নানা মনে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে সকলেই একটি বিষয়ে নিশ্চিত আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। আমি এর পূর্বে বেশ কয়েকটি লেখা লিখেছি আওয়ামী লীগকে নিয়েÑ সেসব লেখার একটি হলোÑ ‘আওয়ামী লীগের বিজয় কেন জরুরি’। এই লেখাটি পড়ে অনেকেই আমাকে টেলিফোনে, ই-মেইলে, মেসেঞ্জারে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে আরো লেখা প্রত্যাশা করেছেন। সে কারণেই আজকের এই লেখার সূত্রপাত।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতীক ‘নৌকা’ মূলত বিজয়েরই প্রতীক। নৌকা মার্কা হক-ভাসানীর ছিল, শেখ মুজিবের নৌকা সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয়েছিল। নৌকা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিজয়ের বন্দরে পৌঁছেছিল। ২০০৮ সালেও নৌকা মার্কা জয়ী হয়ে বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। নৌকাই এখন উন্নয়ন আর সম্মান বয়ে আনছে বাংলাদেশের মানুষের জন্য। সুতরাং যে নৌকার এত অবদান সেই নৌকার বিজয় ঠেকানো আজ আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। এই কারণগুলো একে একে তুলে ধরলে দেখা যাবে এককভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারবে। আওয়ামী লীগের মতো একটি শক্তিশালী দল এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এককভাবে সরকার গঠন করতে হলে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো বিভিন্নভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই সেই দল যে দলের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময। আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে চমক দেখাচ্ছে তাতে অভিভূত না হওয়ার কোনো কারণ নেই। ভিক্ষুকের জাতি থেকে বাঙালিকে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ স্বনির্ভর জাতিতে রূপান্তরিত করেছে এটা শুধু গৌরবের বিষয় নয়, অহংকার করার মতো ঘটনাও বটে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির জনকের হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও একুশে আগস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার করে বাংলাদেশের বিচারহীন পরিবেশে ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপন করেছে। স্ব-অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা। এছাড়া পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তার কোনো তুলনা নেই।
গত দশ বছরের বাংলাদেশ আর তার আগের বাংলাদেশ কোনোভাবেই এক নয়। দুই সময়ের বাংলাদেশের মধ্যে আছে আকাশ-পাতাল ফারাক। এই ফারাকটুকু জনগণকে বুঝতে না পারলে জনগণ গুজবে কান দিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। জনগণ বিভ্রান্ত হলে আওয়ামী লীগের ভোট কমবে। সুতরাং সঠিকভাবে প্রতিটি অর্জনের প্রচার জনগণের মধ্যে করতে পারলে বিজয় নিয়ে ভাবতে হবে না। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের দল। তাদের জন্মই হয়েছিল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানায় বাঙালি চিরদিন সুখে-শান্তিতে হাসিমুখে জীবনযাপন করবে এটাই ছিল আওয়ামী লীগের আকাক্সক্ষা। সেই আকাক্সক্ষা এত দিনে নানা কারণে বাস্তবায়ন হয়নি। সেই কারণগুলো আমাদের সবারই কমবেশি জানা আছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা-বিরোধীরা শুরু থেকে প্রচার-প্রপাগা-া চালিয়ে বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা এখনও সক্রিয় আছে। হয়তো অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে না বলে স্বাধীনতা-বিরোধী পরাজিত শক্তি নিশ্চুপ আছে, তবে তারা একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়নি। জঙ্গিরা যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে বাংলাদেশে তা-ব সৃষ্টি করেছিল, আওয়ামী লীগই জঙ্গিদের কঠোর হাতে দমন করে বাংলাদেশকে জঙ্গিমুক্ত করেছে। এ কারণেও আওয়ামী লীগ জনতার ভোট পাওয়ার দাবিদার এবং আওয়ামী লীগের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে প্রবল। মানুষ আজ বুঝতে পারছে, দেশের মঙ্গল ও জনগণের কল্যাণ কেবল আওয়ামী লীগের পক্ষেই সম্ভব। অন্যান্য দল কখনোই বাংলাদেশের মঙ্গল চায় না। তাদের অতীত অত্যন্ত কলুষিত। বর্তমান নানা কারণে প্রশ্নবিদ্ধ, তাদের ভবিষ্যৎ অজানা, অন্ধকার। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিশুদ্ধ ধারায় নিয়ে যেতে হলে আওয়ামী লীগকেই জনগণ বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে।
আগে মানুষ নির্বাচনী ইশতেহার খুব একটা গুরুত্ব দিত বলে মনে পড়ে না। এবার দেখছি বিভিন্ন দলের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়েও পত্র-পত্রিকায়, টকশোগুলোতে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এটাকেও আমি ইতিবাচক দিক বলেই মনে করি। বিশ্লেষকরা বলার চেষ্টা করছেন এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। এই ইশতেহার জনগণের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। যুব সমাজকে আশার আলো দেখিয়েছে। আগামী একশ’ বছরে বাংলাদেশ কোথায় যাবে তার একটা নিখুঁত ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ইশতেহারে বাংলাদেশের মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। সুতরাং নির্বাচনী ইশতেহারের কারণেও আওয়ামী লীগের জয়ের পালে কিছুটা অনুকূল বাতাস লাগবে বলে মনে করা যায়।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটিতে দুইবার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আমরা যখন নির্বাচন পরিচালনা করেছি, তখনকার নির্বাচন আর এখনকার নির্বাচন এক না হলেও খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে আমি মনে করি না। আমার স্পষ্ট মনে আছেÑ নির্বাচনী ইশতেহার আওয়ামী লীগ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই তৈরি করে থাকে। তারা এমন এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতে চায়, যে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করলে সত্যি সত্যি দেশ এগিয়ে যাবে। এবারের ইশতেহারেও সেসব বিষয় লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগের বিজয়ে আশাবাদী হয়ে উঠছি।
আওয়ামী লীগ এখন নির্ভার এ কথা বলা না গেলেও আওয়ামী লীগের সামনে বড় কোনো বাধা নেই এ কথা বলা যেতেই পারে। তবে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র অতীতে ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। যতদিন বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এবং তাদের দোসররা থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারলেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করা সম্ভবÑ এটা দেশদ্রোহীরা জানে বলেই বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার নীল নকশা করতে থাকে। তবে আশার কথা হলোÑ জনগণ এখন বুঝতে পারছে আওয়ামী লীগের হাতেই বাংলাদেশের ভাগ্যবন্দি। বাংলাদেশকে একমাত্র আওয়ামী লীগই সার্বিকভাবে মুক্তি দিতে পারে। তাই এদেশের জনগণ এখন আওয়ামী লীগেই বেশি আস্থাবান। কোনো রাজনৈতিক দলের উপর জনতার আস্থা তৈরি হলে সেই দল নির্বাচনে জয়ী না হয়ে পারে না। তাই আওয়ামী লীগই এবারের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে আরেকটি বিষয় ভূমিকা রাখবেÑ সেটি হলো পরিত্যক্ত, ছদ্মবেশী বুড়ো রাজনীতিবিদদের হাস্যকর ঐক্য। এই ঐক্যবাদীরা যা-ই করছে, তাতেই আওয়ামী লীগের ভোট বাড়ছে। এরা ভাবে মানুষ তাদের খুব সম্মান করে, বাংলাদেশের ত্রাতা বলে মানেÑ আসলে এসবের কিছুই সত্য নয়। পরিত্যক্ত বুড়োরা এদেশের মানুষের কাছে কতটা হাস্যকর হয়ে উঠেছে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমি ভেবে পাই নাÑ কিসের লোভে ওই সম্মানিত বুড়োরা এখন নিজেদের অপমানিত, খেলো করে তুলছেন? ক্ষমতার কি এতই খায়েস তাদের? তারা কি এখন সেই জনপ্রিয়তা ধারণ করেন, যা তাদের যৌবনে ছিল, ছিল আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার সময়ে? এরা নিজেদের যত বড় নেতাই মনে করুনÑ এরা ভোটে দাঁড়ালে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়, এ কথা এদেশের মানুষ জানে। আজ অনেকেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ঠিকাদারী স্বেচ্ছায় নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন বলে প্রচার করছেন। আমার শুধু একটাই জিজ্ঞাসাÑ বাংলাদেশে এখন যে গণতন্ত্র চলছে, অতীতে কোনো সরকার কি এইটুকু গণতন্ত্রও চালু রেখেছিল? দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই বলছি দেশদ্রোহী, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার ছাড়া বাংলাদেশের কোনো সাধারণ মানুষ এখন আর গণতন্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। কেননা গণতন্ত্র কেবল বাকস্বাধীনতা নয়, গণতন্ত্র কেবল অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নয়Ñ গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। সত্যিকারের গণতন্ত্র যদি বাংলাদেশে কেউ দেখিয়ে থাকেনÑ তাহলে সেই গণতন্ত্র দেখিয়েছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। এ কারণেই তিনি পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রীর গৌরব অর্জন করেছেন। বিশ্বের এত এত দেশ থাকতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কেন দ্বিতীয় এটাও আমাদের ভাবা দরকার। দেশে এবার নির্বাচনী-পূর্ব সংঘাত খুবই কম হয়েছে। মৃত্যুর হার দেখে এটা বলে দেওয়া যায়। বিগত বছরের চেয়ে এবার নির্বাচন-পূর্ব সংঘাতে নিহতের হার কম। পরিস্থিতি এখনো পুরো নিয়ন্ত্রণে আছে। এভাবে থাকলে নৌকার বিজয় তথা আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত হবে বলেই মনে করি। সম্প্রতি আরডিসির জরিপে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটকে ২৪৮ আসনে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। এই জরিপ সত্য হবে এটাই আমার বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে উন্নয়নের প্রতিফলন দেখবে এটাই স্বাভাবিক, এটাই জনতার গণরায় হবে।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
Leave a Reply