List

যে দুটি মর্মস্পর্শী ছবি আমাকে কাঁদায়

মোনায়েম সরকার
আগস্ট এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অন্যান্য বাঙালির মতো আমিও শোকবিহ্বল হয়ে পড়ি। আমার শোককে যে দুটি ছবি আরো উসকে দেয়, তার একটি হলোÑ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে সিঁড়ির উপর পড়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত লাশের ছবি। আরেকটি হলো ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার পরে ওষ্ঠে আঙুল ছোঁয়ানো ভয়ার্ত শেখ হাসিনার ছবি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র সফল হয়েছিল এবং ঘাতকরা ২১ বছর বাংলাদেশকে ছিন্ন-ভিন্ন করছিল। শেখ হাসিনার হত্যার ষড়যন্ত্র সফল হলে বাংলাদেশের পরিণতি হতো তা ভাবাই যায় না। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধি পাকিস্তানের ৯৩ হাজার বন্দি সৈন্য মুক্তি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনের জন্য। ওই ৯৩ হাজার বন্দি সৈন্যের বিনিময়ে শ্রীমতি গান্ধি হয়তো কাশ্মীরকেও দাবি করতে পারতেন, তিনি তা করেননি। তিনি চেয়েছিলেন মুজিবের প্রাণ। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে বাংলার ঘাতকদের হাতেই সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু। আমরা যারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি, তার আগে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে অংশ নিয়েছি তারা জানি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত বড় মাপের নেতা ছিলেন। তিনি নাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের কথা আমরা চিন্তাই করতে পারতাম না। তাঁর দূরদর্শী ও ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে একটি পরাধীন জাতি পায় স্বাধীনতার স্বাদ। বহু বছরের শোষণ-দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি গড়ে তোলেন সমৃদ্ধিশালী, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। একটি অবহেলিত ভূখণ্ডের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা অর্জন করার মতো নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বিরল নেতা। শেখ মুজিব আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন, প্রজাপ্রেমী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন। যে মানুষটি কখনোই বাঙালিকে অবিশ্বাস করেননি, শত্রু ভাবেননি, সেই শুদ্ধ চিত্তের মানুষটিকেই কয়েকজন স্বার্থপর-ঘাতক সপরিবারে হত্যা করলÑ যা শুধু বাঙালির ইতিহাসেরই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও একটি কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা- শুধু একটি হত্যাকাণ্ডই নয়, একটি স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক জাতিকে পরাধীন ও সাম্প্রদায়িক করার পাশবিক চক্রান্তও বটে। আমি যখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সিঁড়িতে তাঁর রক্তাক্ত লাশের ছবিটি দেখি তখন আবেগআপ্লুত হই। আমার চোখ কান্নায় ভিজে যায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে আজ প্রায় অর্ধ শতাব্দী হতে চলল। এই অর্ধ শতাব্দীতে আমি অনেক পরিবর্তন লক্ষ করছি যা আগে কখনো করিনি। জাতীয় শোক দিবস এখন যেভাবে উৎসবের মতো করে পালন করা হচ্ছে আগের দিনের শোক দিবস এভাবে পালিত হতো না। অতীত দিনের সেসব শোক দিবসের জৌলুস ছিল না, কিন্তু গাম্ভীর্য ছিল। সেখানে সৃষ্টিশীলতার-মননশীলতার চর্চা থাকতো। আজকাল ‘কাঙালি ভোজন’ আর নেতাকর্মীদের হৈ-হুল্লোড়ই প্রধান আকর্ষণ থাকে জাতীয় শোক দিবসে। ব্যানার-ফেস্টুনে নেতাকর্মীরা নিজের ছবি ছাপায় বঙ্গবন্ধুর চেয়েও বড় করে, ভুল বানানে লেখা থাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হয় নিয়ম রক্ষার অনুষ্ঠান। এগুলোকে আমি ছোট করে দেখছি না, তবে জাতীয় শোক দিবসের মর্যাদা আরো ব্যাপক ও হৃদয়স্পর্শী হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি। ১৯৭৫-এর পরে দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ভুলানো হয়েছে, তার নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনা লড়াই-সংগ্রাম করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে থাকে, এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণই আওয়ামী লীগের অনুকূলে। সারাদেশে এখন আমি শুধু আওয়ামী লীগারই দেখি, এদের দেখে আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ ’৭৫-এর পরে এদের কাউকেই দেখিনি এমন কিÑ আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত থাকাকালীনও নয়। আমার মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে এরা কারা? এরা কি সত্যিকার অর্থেই মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সিপাহসালার- নাকি সুবিধাবাদী, ছদ্মবেশী গুপ্তচর? ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা মুজিব আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম করেছেনÑ আজ তারা অনেকেই আওয়ামী লীগে নেই, অনেকেই মারা গেছেন, অনেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর যারা শেখ মুজিবের পক্ষে দেশে-বিদেশে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে, প্রকাশনা বের করেছে, সভা-সেমিনার, বক্তৃতার আয়োজন করেছে তাদের কথা আজ খুব মনে পড়ছে। ১৯৭৫-এর ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর নূরুল আমীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ম. আখতারুজ্জামান ও আমি একটি লিফলেট তৈরি করি। সেই লিফলেটটির হেডলাইন ছিলÑ ‘মীরজাফররা হুঁশিয়ার’। আর লিফলেটের বক্তব্য ছিলÑ ‘তোমরা যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সহযোগিতা করবে, তাদের সবংশে নির্বংশ করা হবে।’ লিফলেটের হাতের লেখা ছিল নূরুল আমীনের। পরে ওটা হাত মেশিনে ফটোকপি করা হয়। এই লিফলেটটি আমরা মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডিসি ও এসপিদের কাছে ডাকযোগে পাঠাই এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এটা হলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। সে সময়ের শোক-সভাগুলো কেমন হতো এবার তার কিছু নমুনা দেই।
১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে ছাত্র-শিক্ষক-জনতার শোক মিছিল যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে শ্রদ্ধা জানাতে। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে ১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম শোকসভা হয় লন্ডনের কনওয়ে হলে। কিন্তু সেদিনের শোকসভা প- করার জন্য জিয়ার অনুগত পেটোয়া বাহিনী হামলা করেÑ তখন লন্ডন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাউস খানসহ অন্যরা (রুহুল কুদ্দুস, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম) সাহসের সঙ্গে সেই হামলা মোকাবেলা করেন। জিয়ার অনুগতদের পিটিয়ে হল ছাড়া করেন। এরপর ১৯৭৭ সালে আমরা দিল্লির গান্ধী মেমোরিয়াল হলে শোকসভার আয়োজন করি। এই শোকসভায় ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাই কমবেশি অংশ নেন। সেদিনের সেই শোকসভায় যারা বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাদের বেশ কয়েকজনের নাম আমার স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। এরা হলেনÑ ইন্দিরা গান্ধীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি এন হাকসার, বিশ্বশান্তি পরিষদের রমেশ চন্দ্র, কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি ভি ভি রাজু, জনতা পার্টির নেতা কৃষ্ণ কান্ত। সেদিনের শোকসভার সভাপতি ছিলেন বিপ্লবী ও লেখক মন্মথনাথ গুপ্ত।
আমি মনে করি জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন আমরা এটি সদ্ব্যবহার করব। শোক দিবসে কান্না-হাহাকার নয়, বঙ্গবন্ধুকে সঠিকভাবে বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করাই হওয়া উচিত শোক দিবসের মূললক্ষ্য। এ জন্য দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেশি বেশি করে সভা-সেমিনার-প্রকাশনা ও গবেষণামনস্ক হওয়া দরকার। ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ বলে সরকার ঘোষণা করেছে। এবারের ১৫ আগস্ট যেভাবে উদ্যাপিত হয়েছে তাতে সারা বাংলায় কিছুটা হলেও সাড়া পড়েছে। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এমনভাবে উদ্যাপন করতে হবে, যেন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার মনে জ্বলজ্বল করেন বঙ্গবন্ধু। আমি মনে করি মুজিববর্ষে ব্যাপক কাজ হওয়া দরকার। দেশি-বিদেশি খ্যাতনামা গবেষক দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক নিয়ে গ্রন্থ মুদ্রণ করা দরকার। এগুলোই বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রাখবে। শুধু শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে না থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়েও আমাদের কিছু করণীয় আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। ব্যক্তি মানুষের মনে যখন বঙ্গবন্ধু থাকবেন তখন আওয়ামী লীগ এমনিতেই যুগ-যুগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকবে। জাতীয় শোক দিবস এলে দেখি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরাও আজ ছদ্মবেশ ধারণ করে মুজিবপ্রেমী হওয়ার চেষ্টা করে। দেখে খুব কষ্ট পাই। যারা পলিটিক্যালি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তো আপস করার কথা ছিল না, তবু আজ আমরা সেটাই দেখছি। কেন দেখছি? দেখছি এই জন্য যে, আওয়ামী লীগাররা সংখ্যায় বৃহৎ দেখায় বটেÑ আসন সংখ্যায় এখনো অনেক পিছিয়ে থাকে নানা ষড়যন্ত্রে। এসব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করতে হবে।
যারা বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে তাদের একমাত্র ভরসা তো আওয়ামী লীগই। বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। দারুণ এক ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল। বিগত এগারো বছরে বাংলাদেশে যে অসম্ভব উন্নয়ন হয়েছে আগামী দিনের ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।
বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন তা কল্পনারও বাইরে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে নেই। তাছাড়া দলটি বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, এগারো বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা (বর্তমানে যা ৭.১১ শতাংশ), বিশ্বব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই সরকারের আমলে দেশে-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা, আশ্রয়ন, একটি বাড়ি একটি খামার, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অসংখ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ, উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান সত্য।
পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে সেখানে বোমা হামলা হতো, এমন কি ৬৩টি জেলায়ও এক সঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। যারা বাংলাদেশকে বিশ্বাস করে না, যারা মৌলবাদের বীজ বুনতে চায় বাংলার মাটিতে, শেখ হাসিনা তাদের টার্গেটে বহুদিন ধরেই আছে। কিন্তু শেখ হাসিনার মৃত্যু শুধু ব্যক্তির মৃত্যুই হবে না, সেটি হবে একটি উদীয়মান দেশের উন্নয়নের মৃত্যু, সীমাহীন সম্ভাবনার মৃত্যু। এসব আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং আওয়ামী লীগের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। যখনই বাংলাদেশের মাটিতে ঘাতকচক্র ও বিরোধী শিবিরের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়েছে তখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম অশান্তি কিংবা সামরিক থাবা। বাংলাদেশের জন্য লড়েছে আওয়ামী লীগ, বর্তমানে দেশও গড়ছে আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও আত্মসমীক্ষার মুখোমুখি হওয়া দরকার। দল এখন ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে কিন্তু পর্যবেক্ষণ শক্তি কমে। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে অতুলনীয় নেত্রী। তিনি একাই আওয়ামী লীগের ভার বহন করতে সক্ষম। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা যতই ক্লিন ইমেজ তৈরি করুন না কেন যদি তার দলীয় লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, দলীয় নীতি বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে সামনে ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। ভুলে গেলে চলবে নাÑ একদল লোক বাংলাদেশে বসে এখনো পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখছে। মৌলবাদী ও পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে তাদের ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য।
বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনাকে ঘিরে এখন মানুষের মাঝে অনেক আশা তৈরি হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এই জন্যই রাজপথে বিরোধী দলের মিছিল-মিটিং জনশূন্য। এটা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। সব দিক সামাল দিয়ে এখন ঠাণ্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদকেও স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সেখানে নিতে গেলে অবশ্যই শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি সঠিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, কেননা শেখ হাসিনার সুস্থ-সুন্দর-নিরাপদ ভবিষ্যৎ আর বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্রই হোক বাংলাদেশের স্বার্থে তা বাংলার মানুষকেই মোকাবিলা করতে হবে। এই সত্য আমরা যত দ্রুত উপলব্ধি করবোÑ আমাদের সার্বিক মুক্তি তত দ্রুতই বাস্তবতায় রূপ নেবে।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
৩০ আগস্ট, ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 3 4 5 12
September 29th, 2018

ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে কেন?

ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে কেন? মোনায়েম সরকার সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়েলথ এক্স’ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে অতি ধনীর […]

August 31st, 2018

জোট-ভোট ও আন্দোলনের আস্ফালন

জোট-ভোট ও আন্দোলনের আস্ফালন মোনায়েম সরকার বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তি থাকুক আর না থাকুক সবগুলো দলই জোট গঠনে ব্যস্ত হয়ে […]

August 27th, 2018

ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আওয়ামী লীগকে উজান পথেই এগিয়ে যেতে হবে

ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে আওয়ামী লীগকে উজান পথেই এগিয়ে যেতে হবে মোনায়েম সরকার বঙ্গীয় ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটাতে প্রথম যে […]

August 25th, 2018

আত্মপ্রচার নয়, মুজিব আদর্শ প্রচারে দৃষ্টি দিন

আত্মপ্রচার নয়, মুজিব আদর্শ প্রচারে দৃষ্টি দিন মোনায়েম সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের […]

July 19th, 2018

জোট ও ভোটের রাজনীতি

বর্তমানকালের রাজনীতিতে একটি বিষয় লক্ষণীয় তাহলো, সমমনা দলের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠন। জোট ছাড়া আজকাল ভোট হয় না বলেই মনে […]

July 15th, 2018

রাজনীতি ও ওল্ড ক্লাউনদের নির্বুদ্ধিতা

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে সকল প্রকার বাধাবিঘœ অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। আজকের বাংলাদেশ আর অতীতের বাংলাদেশ এক […]

June 27th, 2018

’৭০-এ আওয়ামী লীগ শুধু অর্জনের বিবরণী নয়, আত্মসমালোচনাও দরকার

’৭০-এ আওয়ামী লীগ শুধু অর্জনের বিবরণী নয়, আত্মসমালোচনাও দরকার মোনায়েম সরকার বঙ্গীয় ইতিহাসে ২৩ জুন অন্তত দুটি কারণে বাঙালির মনে […]

June 27th, 2018

২৫ মার্চ, ১৯৭১ : অপারেশন সার্চ লাইটের অতর্কিত গণহত্যা

২৫ মার্চ, ১৯৭১ : অপারেশন সার্চ লাইটের অতর্কিত গণহত্যা মোনায়েম সরকার ২৪ মার্চ একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে ঢাকায়। সবাই বলাবলি […]

May 25th, 2018

অসম সরকারি নীতিমালার পরিণাম ক্ষোভ আর সর্বনাশ

বর্তমান সরকারের আমলে দেশ অনেক এগিয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই সাফল্যে এখনই তৃপ্তির ঢেঁকুর গেলা ঠিক হবে না। আমরা যদি […]

May 17th, 2018

Now Bangabandhu Shine like the Polestar in Space

After 47 years of existance Bangladesh has entered into a new era, launching successfully its first communication satellite Bangabandhu-1 to […]