List

আগস্ট শোকের মাস। এই আগস্ট মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে তাদের অনেক কৃতী সন্তান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট হারিয়েছি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হারিয়েছি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট আমরা হারালাম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতি হারিয়েছে তাদের প্রিয় নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শোকাবহ আগস্টে অন্য সব বাঙালির মতো আমিও আবেগতাড়িত হই। শোকাবহ এই মাসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো স্মৃতি রোমন্থন নয়- তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সমকালীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে দু’একটি কথা লিখতে চাই।

বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গ বেশ জোরেশোরে পত্রপত্রিকায় আলোচনা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন দলগুলোই মূলত জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দাবি করে আসছে। জাতীয় ঐক্য গড়ার দাবি কোন প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত হচ্ছে সেই ইতিহাসটুকু একটু ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, মুক্তিযুদ্ধে যে সব নেতাকর্মী রণাঙ্গনে নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন, দেশ স্বাধীনের পরে তারাও তাত্তি¡ক দর্শনের নামে দলে ও দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছিলেন। জাসদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নৈরাজ্য ও অত্যাচার, সর্বহারা পার্টির লুণ্ঠন, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশ ও মুজিব সরকারকে তখন কিছুটা অস্থির করে ফেলেছিল। সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে রাষ্ট্রীয় শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছিল। তারা পাটের গুদামে আগুন দিয়েছিল, ঈদের জামায়াতে মানুষ হত্যা করেছিল, ডাকাতি, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ২৭ জন এমপিএ ও এমএনএকে বহিষ্কার করেছিলেন দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর লক্ষ্যে। তখন বঙ্গবন্ধু জাতীয় ঐক্য তথা বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই জাতীয় ঐক্য গড়ার চিন্তা যে ভুল ছিল না- আজকের দিনে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রস্তাব শুনে সেই কথাই আমার বারবার মনে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে একাত্তরের জনগণের ঐক্য ছিল সত্যিকার জাতীয় ঐক্য। মুক্তিযুদ্ধ কালপর্বের ঐক্য থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ আমার মনে হচ্ছে নেতায় নেতায় ঐক্য করে লাভ নেই, ঐক্য করতে হবে জনগণের সঙ্গে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যারা জাতীয় ঐক্য গঠন করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন তারাও পরে হাত মিলিয়েছিল সামরিক শাসক ও মুজিব হন্তারকদের সঙ্গে। সুতরাং যেসব নেতা আজ জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, তারা কি মতলবে এসব বলছেন তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতাবিরোধী ধারায় চলছে বলেই আজ এই সংকট। যে আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল এবং সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল তাদের পরামর্শে জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রস্তাব বাংলাদেশের মানুষ কিছুতেই মানবে না। কেননা বাংলাদেশের মানুষ জানে আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর দরকার নেই, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে চোর-ডাকাতদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল, সামাজিক অন্যায়-অপরাধের বিরুদ্ধে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। একাত্তর সালে যেভাবে বাঙালি জাতীয় ঐক্য করেছিল, সেইভাবে ঐক্য করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের থাবা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সেভাবেই জনতার সঙ্গে ঐক্য গড়তে হবে, সেটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে দেশকে যখন উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তখনই তথাকথিত জঙ্গিরা তাদের দুষ্কর্মের মাধ্যমে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তারা বিদেশি নাগরিক, পাদ্রি, পুরোহিত, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ নানা স্থাপনায় হামলা চালিয়ে নির্বিচারে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। আমরা দেখেছি দেশ যখন স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বিএনপির পেট্রলবোমা ও আগুন সন্ত্রাসে দেশের চলমান অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছিল। ওই সময়ও ‘সংলাপ’-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে বিএনপি জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিএনপির সেই অপচেষ্টা সফল হয়নি, সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই আগুনসন্ত্রাস মোকাবেলা করে দেশকে আবার ঠিক পথে নিয়ে যেতে পেরেছে। সংলাপ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বিএনপি আবার স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এখন আবার চোরাগুপ্তা হামলাসহ মানুষ হত্যার রাজনীতি করছে। এখন এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তারা জিকির তুলছে জাতীয় ঐক্য গড়ার। বিষয়টি একটু ভেবে দেখা দরকার। রাষ্ট্রের মৌলবাদীদের সন্ত্রাস মোকাবেলা করা দেশের প্রত্যেকটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের একান্ত দায়িত্ব। বিএনপি ও তার জোটভুক্ত দলগুলো জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো শান্তি সমাবেশ করতে পারেনি, জনগণকে সম্পৃক্ত করে তারা এই জঙ্গিবাদ মোকাবেলার কোনো দিকনির্দেশনাও দিতে পারছে না। তারা শুধু বলছে জাতীয় ঐক্য হলেই এই সন্ত্রাস নির্মূল হবে। যদি প্রশ্ন করা হয়, জাতীয় ঐক্য হলেই এই সন্ত্রাস নির্মূল হয়ে যাবে- তাহলে কি আমরা বুঝে নেব যে এই জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের পেছনে বিএনপির হাত আছে? তা না হলে বিএনপি কিভাবে গ্যারান্টি দিতে পারে যে, জাতীয় ঐক্য হলেই এই জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদী তৎপরতা সমূলে বিনষ্ট হবে? রাষ্ট্র যেখানে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদের রুখতে সেখানে বিএনপির এই অযৌক্তিক দাবি কিভাবে মেনে নেবে বাংলাদেশের মানুষ?

বিএনপির কোনো প্রস্তাবই আজ আর বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য পজেটিভ নয়। একটি রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ওরস্যালাইন মার্কা দল কখনোই সেই দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে না। বিএনপির নির্বাচন বর্জন, বাংলাদেশবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাত, জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও হাওয়া ভবনের অপতৎপরতার কথা বাংলার মানুষ ভালো করেই জানে। বিএনপি জানে মাঠে তাদের সমর্থন নেই। কেউই আজ আর বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে যেতে চায় না। যেহেতু বিএনপির গণআন্দোলনের শক্তি নেই এবং বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই, তাই বিএনপি এমন এক ঘৃণ্য পথের আশ্রয় নিয়েছে যে পথে হাঁটলে তাদের সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতাই কেবল সঞ্চয় হবে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে বিদেশিদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করার যে কুটবুদ্ধি বিএনপি ও তার সন্ত্রাসীবন্ধু সংগঠনগুলো করেছিল সেই আশায় গুড়েবালি, সরকার জঙ্গিদের আটক করছে, তাদের আস্তানা শনাক্ত করে সফল অভিযান চালাচ্ছে। এর ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরাও শেখ হাসিনা সরকারের পাশে থাকার এবং তাকে সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করার কথা ব্যক্ত করেছেন। এতেই বুঝা যায় বিএনপির সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদী পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে বসেছে।

জাতীয় ঐক্য গড়ার বিষয় উত্থাপিত হলে আমাদের যেতে হবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে। বঙ্গবন্ধু যে কত বড় দূরদর্শী নেতা ছিলেন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হলে এবং তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার কথা চিন্তা না করলে বুঝা যায় না। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে তখন যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল সেই রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্য বঙ্গবন্ধু তখন বিকল্প খুঁজছিলেন। সেই বিকল্পই ছিল বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির প্রয়াস। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই দূরদর্শী চিন্তা তখন কতিপয় উগ্রবাদী সংগঠন ও বঙ্গবন্ধুর বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে। যারা বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্য গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো আদ্যোপান্ত পাঠ করেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রণীত সেই জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কত মহৎ ছিল, সেদিন যদি বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গঠিত হতো তাহলে আজকের বাংলাদেশের চেহারা ভিন্ন রকমের হতো। আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশ নয়- উন্নত দেশ হিসেবেই বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত হতাম।

বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টায় সেদিন যারা স্বেচ্ছায় সাড়া দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে তাদেরও কেউ কেউ জাতীয় ঐক্যের বিরোধিতা করেছিলেন। যারা অনেক চেষ্টা করে জাতীয় ঐক্যের সদস্যপদ লাভ করেছিলেন পরে তারাই কুৎসা রটনা করেছে বঙ্গবন্ধু ও তার প্রস্তাবিত জাতীয় দলের। একটি সংকটময় মুহূর্তের জন্য বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাবিত জাতীয় ঐক্যের থিওরি অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল। আমার তো মনে হয়, আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্যের মর্মবাণী বুঝতে পারেননি। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুর জাতীয় দল প্রসঙ্গে তারা যেভাবে লজ্জিত হন- তাদের সেই লজ্জাটুকু থাকত না। বরং সেই আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিচালনার ভার নিলে দেশ আরো দ্রুতগতিতে উন্নত হতো। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে বঙ্গবন্ধু প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্য নিয়ে আওয়ামী লীগকে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। বিষয়টি এমন যেন বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে জাতীয় ঐক্য ঠিক ছিল তার মৃত্যুর পরে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেল ভুল থিওরি।

একজন সামান্য রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি আজ বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য গঠনের দাবি বিভ্রান্তিকর প্রস্তাব। সমমনা রাজনৈতিক দল ছাড়া জাতীয় ঐক্য গঠন করা অসম্ভব। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি কিংবা জাসদ কোনো দলই সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় রাজনীতি করে না। এই দলগুলোর অতীত ইতিহাস অন্তত তাই বলে।

শত্রুর সঙ্গে গলাগলি নয় বরং শত্রুকে শনাক্ত করে শাস্তি দেয়াই হবে বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ। আওয়ামী লীগ যখন শক্ত হাতে সেই কাজটি করতে যাচ্ছে এমন সময় ‘জাতীয় ঐক্য’ গঠনের প্রস্তাবকে পলাশী যুদ্ধের মীরজাফরের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বলেই মনে হচ্ছে। মীর জাফরের কুট প্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলার যুদ্ধরত বাহিনী সেদিন যুদ্ধ অব্যাহত রাখলে নবাব পরাজিত হতেন না, ব্রিটিশরাও এ দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে ব্যর্থ হতো। ’৭৫-পরবর্তী কালপর্বে স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি তথা আওয়ামী লীগ দুর্বল হতে থাকে, শক্তিমান হয়ে ওঠে স্বাধীনতাবিরোধীরা। আজ আবার আওয়ামী লীগকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হবে। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যাকে অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে হাঁটা মানায় না। অন্যের পায়ে না হেঁটে আওয়ামী লীগকে নিজের পায়ে হাঁটা শিখতে হবে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় এবং কৌশলে সেই কাজটি করা প্রয়োজন। তাই বর্তমান সরকারের উচিত হলো, মূলধারার রাজনীতি চলমান রাখার পাশাপাশি দলে শুদ্ধতা ফিরিয়ে আনতে হবে। দলকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে এবং স্বাধীনতাবিরোধী ও বাংলাদেশবিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এবং জনগণের মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। আজও প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুর মতো শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে। জনগণই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে আওয়ামী লীগ দল ও সরকারকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে জনগণের সম্মুখে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে। ’৭১-এর মতো আজও বাংলাদেশের মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করছে, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও স্বেচ্ছায় রাজপথে শামিল হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এটাকে আশার আলোর ঝলকানির মতোই মনে হচ্ছে।

আগস্ট এলেই শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ঢেকে যায়। ওইসব ব্যানার পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবির চেয়ে (ছদ্মবেশী) বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের ছবিটাই সবার আগে চোখে পড়ে। আমরা ব্যানারসর্বস্ব মুজিবপ্রীতি দেখতে চাই না। আমরা চাই আদর্শবান, দেশপ্রেমিক, দূরদর্শী মুজিবপ্রেমী। এবারের পনের আগস্টের শপথ হোক- ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্বৃত্তমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে শোষিত মানুষের পক্ষে ও শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সরকার ও সাহসী জনতার সম্মিলিত প্রয়াসে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক ও ক্ষুধামুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 6 7 8 12
September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর হেনা ভাই : অভ্রভেদী আলোকস্তম্ভ

এএইচএম কামারুজ্জামান বাংলাদেশের স্বনামধন্য পুরুষ। তার আসল নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম ‘হেনা’। হেনা নামেই তিনি অধিক পরিচিত […]

August 26th, 2017

Globalization Terrorism & Corruption Changed our Planet Earth

For good or for ill, amongst all the current scientifically known solar planets of the universe, the earth is the […]

August 13th, 2017

Sheikh Mujib : A poet of Politics

Though Bangabandhu was the leader of a small and poor South Asian country, it is doubtful whether any contemporary leader […]

August 13th, 2017

শেখ মুজিব : মৃত্যুঞ্জয় ছায়াবৃক্ষ

বাংলার উর্বর মাটিতে যুগে যুগে অসংখ্য কীর্তিমানের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব প্রাতঃস্মরণীয় কীর্তিমানদের নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কবি, কথাশিল্পী ও গবেষক […]

August 5th, 2017

পুঁজিবাদ ক্যান্সার-আক্রান্ত হয়ে পড়েছে

বর্তমান পৃথিবী হিংসা, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ ও স্বার্থপরতায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। তাই দেশে-দেশে ও মানুষে-মানুষে মারামারি, কাটাকাটি, রক্তপাত লেগেই আছে। মানুষের […]

July 15th, 2017

বদলে যাচ্ছে রাজনীতির ব্যাকরণ

মানুষ সমাজবদ্ধ রাজনীতিসচেতন জীব। জীবন-যাপনের জন্য মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হয়। তৈরি করতে হয় নানারকম প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র মানবরচিত সবচেয়ে বড় […]

June 23rd, 2017

সরকারের শুধু সমালোচনা নয়, ইতিবাচক সমাধান বলুন

ঢাকার বাইরে অবস্থান করে যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় লিপ্ত এবং যাদের লেখা পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় এদের মধ্যে সিলেটের ড. মুহাম্মদ […]

June 23rd, 2017

রাজনীতিতে পুতুল খেলা ও মৌ-দুধ খাওয়া আর কতদিন চলবে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন পুতুল (খালেদা জিয়া) ও একজন মওদুদ (মৌ-দুধ) আহমদ বর্তমানে বেশ আলোচিত। এই আলোচনার কারণ অবৈধভাবে দখলে থাকা […]