List

আত্মপ্রচার নয়, মুজিব আদর্শ প্রচারে দৃষ্টি দিন

মোনায়েম সরকার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি। তিনি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাই এনে দেননি তার আদর্শবাদী চিন্তা ও দর্শনই বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। বাঙালি যত বেশি শেখ মুজিবের চিন্তা ও দর্শন ধারণ করবেÑ ততই সুখী, সমৃদ্ধিশালী হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করতে হলে শেখ মুজিবের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আজকাল খুব দুঃখের সঙ্গেই লক্ষ্য করছি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মুজিব আদর্শ নয়Ñ আত্মপ্রচারেই বেশি মনোযোগী। এটাকে আমার কাছে নেতিবাচক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে হয়। স্বাধীনতা দিবসে, জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী বা শাহাদাৎবার্ষিকীতে অনেকেই ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড তৈরি করেন মনের খুশিতে। সেখানে এক কোণায় অবহেলায় পড়ে থাকেন শেখ মুজিবÑ আর নিজের ছবি পুরো ব্যানার-ফেস্টুন-প্লাকার্ড জুড়ে প্রকাশ করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। এতে ব্যক্তি বা দল কতটুকু উপকৃত হয় জানি না, তবে ঢাকা পড়ে যায় মুজিব আদর্শ প্রচার। একজন কর্মী যত বেশি মুজিব আদর্শ আঁকড়ে ধরবেন তত বেশি শক্তিশালী হবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ভিত্তি ভূমিতো শেখ মুজিবের আদর্শই। সুতরাং মুজিব আদর্শ পাশ কাটিয়ে নিজেকে প্রচার করার মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য আছে বলে আমি মনে করি না।
১৯৮২ সালে আমরা একটি সংকলন করেছিলাম ‘রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি’ নামে। সেই সংকলনটি করেছিলাম এমন একটি সময়ে যখন শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ করাও নিষিদ্ধ ছিল। তারও আগে আমরা প্রকাশ করেছিলামÑ ‘বাংলাদেশের সমাজ বিপ্লবের ধারায় বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ নামের একটি বই। পূর্বোক্ত সংকলনগুলোতে আমরা বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শনকে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলাম। আজকের দিনে এত এত উপাদান থাকতেও কেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আওয়ামী লীগের তরুণ-প্রবীণ নেতাকর্মীরা কোনো ভালো কাজ করছে না তা-ই ভেবে পাই না।
বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় অসংখ্য ভাষণ-বক্তৃতা দিয়েছেন। সে সব ভাষণ-বক্তৃতায় দেশ-জাতি-মানবতার কল্যাণমূলক অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন তিনি। জেলখানায় বসে তিনি যে দুটো বই লিখেছিলেন অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচাÑ তার মধ্যেও আছে বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শনের কথা। সেই কথাগুলো মানুষের সামনে যত বেশি তুলে ধরা হবে ততই প্রতিষ্ঠিত হবে মুজিব আদর্শ। দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আজ বয়সের ভারে প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও পরোক্ষ রাজনীতিতে এখনও আমি সক্রিয়। যেসব আত্মপ্রচারমুখী নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুন-পোস্টারে নিজের ছবি ছাড়া আর কিছু লেখার কথা চিন্তাও করেন নাÑ তাদের জন্য আমি তুলে ধরছি বঙ্গবন্ধুর কিছু অমর বাণী। আশা করি এই প্রজন্মের নেতাকর্মীরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই অনুধাবন করবেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনÑ ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সশ¯্র বাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের গুরুভার বহন করতে দেয়া কোন প্রকারেই উচিত নয়। রাজনীতিতেও সশস্ত্র বাহিনীর জড়িয়ে পড়া একেবারেই অনুচিত। উচ্চতর শিক্ষাপ্রাপ্ত পেশাদার সৈনিকদের জাতীয় সীমানা রক্ষার গুরুদায়িত্ব এককভাবে পালন করা বাঞ্ছনীয়। … গণতন্ত্র ধ্বংসের যে কোন উদ্যোগ পরিণতিতে পাকিস্তানকে ধ্বংস করবে [২৮ অক্টোবর, ১৯৭০]।’ পাকিস্তানের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা আজো টের পাওয়া যায়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে কথাগুলো বলেছিলেন সেখান থেকেও অনেক কথা উদ্ধৃত করা যায়। যেমনÑ ‘আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ অধিকার চায়। … এরপর যদি ১টি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়Ñ তোমাদের কাছে অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। … সৈন্যরা, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করবার চেষ্টা কর না। …রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো। ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা [৭ই মার্চ, ১৯৭১]।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু আবেগঘন ভাষণ দেন। সেই ভাষণে প্রকাশ পায় বঙ্গবন্ধু স্বদেশ, স্বজাতি ও স্বভাষাপ্রেমÑ ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। … বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে, তারা বীরের জাতি, তাঁরা নিজেদের অধিকার অর্জন করে মানুষের মত বাঁচতে জানে। … আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশে কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে [১০ই জানুয়ারি, ১৯৭২]।’
শোষণের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সোচ্চার ছিলেন। সুযোগ পেলেই তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেনÑ ‘আমরা শোষণ-মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার শপথ নিয়েছি। সোনার বাংলার মানুষদের নিয়ে ধৈর্য ধরে কাজ করে আমরা গড়ে তুলবো এই শোষণহীন সমাজ। … যে শহীদেরা আমাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা তুলে দিয়ে গেছে তাঁদের মৃত্যু নেই। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপূর্ণ জীবন তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে [১৬ই জানুয়ারি, ১৯৭২]।’ তিনি আরো বলেছিলেনÑ সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি। আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারবো না [২১শে জানুয়ারি, ১৯৭২]। শোষকের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর হুঁশিয়ারি ছিল Ñ ‘শোষকদের আর বাংলাদেশে থাকতে দেয়া হবে না। কোন ‘ভুঁড়িওয়ালা’ এ দেশের সম্পদ লুটতে পারবে না। গরীব হবে এই রাষ্ট্র এবং সম্পদের মালিকÑ শোষকরা নয় [২৪শে জানুয়ারি, ১৯৭২]।’
বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি বলেছেনÑ ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ না থাকলে আমাদের স্বাধীনতার অস্তিত্ব বিপন্ন হবে [৯ই মে, ১৯৭২]।’ শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদই নয়, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নেও বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল স্পষ্ট। যেমনÑ ‘চারিটি মৌলিক আদর্শ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপর এ সংবিধান রচনা করা হয়েছে। এই আদর্শের ভিত্তিতে বাংলায় নতুন সমাজ গড়ে উঠবে [১২ই অক্টোবর, ১৯৭২]।’
আমৃত্যু সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর মনোভাব প্রকাশ পায় নি¤েœর উদ্ধৃতিটিতেÑ ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চিরদিন আপনাদের সঙ্গে থেকে সংগ্রাম করেছি। আজও আমি আপনাদের সহযোদ্ধা হিসাবে আপনাদের পাশে আছি। দেশ থেকে সর্বপ্রকার অন্যায়, অবিচার ও শোষণ উচ্ছেদ করার জন্য দরকার হলে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করবো [১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭৩]।’
শোষিতের সমাজব্যবস্থা কেমন হবে সেই নির্দেশও আছে বঙ্গবন্ধুর দর্শনে। জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনÑ ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের চারিটি জিনিসের প্রয়োজন, তা হচ্ছে নেতৃত্ব, ম্যানিফেস্টো বা আদর্শ, নিঃস্বার্থ কর্মী এবং সংগঠন। … আত্মসমালোচনা আত্মসংযম আত্মশুদ্ধি চাই। … সমাজতন্ত্র কায়েম করতে হলে কর্মীদের সমাজতান্ত্রিক কর্মী হতে হবে, ক্যাডার হতে হবে, ট্রেনিং নিতে হবে। … গণ আন্দোলন ছাড়া, গণ বিপ্লব ছাড়া বিপ্লব হয় না। … বিশ্ব দুই শিবিরে বিভক্তÑ শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে [জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু,১৮ই জানুয়ারি, ১৯৭৪]।’
বঙ্গবন্ধু কোনোদিনই ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। তিনি রাজনীতি করেছেন বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য, সেই কথাও বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করে গেছেনÑ ‘ভাইয়েরা, বোনেরা আমার, আজকে যে সিস্টেম করেছি তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি, ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগণ যেদিন বলবে, ‘বঙ্গবন্ধু ছেড়ে দাও’ বঙ্গবন্ধু একদিনও রাষ্ট্রপতি, একদিনও প্রধানমন্ত্রী থাকবে না। বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে নাই। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে দুঃখী মানুষকে ভালোবেসে। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করার জন্য [২৬শে মার্চ, ১৯৭৫]।’
বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক মানসিকতা লালন করতেন। এরপর প্রমাণ পাই নি¤েœর উদ্ধৃতিটিতেÑ ‘শাসনতন্ত্রে লিখে দিয়েছি যে কোনো দিন আর শোষকেরা বাংলার মানুষকে শোষণ করতে পারবে না ইনশাল্লাহ। দ্বিতীয় কথা, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ চালাবে, এর মধ্যে কারও কোনো হাত থাকা উচিত নয়। তৃতীয়, আমি বাঙালি। বাঙালি জাতি হিসেবে বাঁচতে চাই সম্মানের সঙ্গে। চতুর্থ, আমার রাষ্ট্র হবে ধর্মনিরপেক্ষ। মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, হিন্দু তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে, বুদ্ধিস্ট তার ধর্ম-কর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। তবে একটা কথা হলো, এই ধর্মের নামে আর ব্যবসা করা যাবে না [২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩, সিরাজগঞ্জে দেওয়া এক জনসভার ভাষণ]।’
বঙ্গবন্ধু আত্মসমালোচনা করতে ভালোবাসতেন। ভুল করলেই তিনি আত্মসমীক্ষা করতেন। এ কথার প্রমাণ আছে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেওয়া ভাষণেÑ ‘আজকে এই যে নতুন এবং পুরান যে সমস্ত সিস্টেমে আমাদের দেশ চলছে, আমাদের আত্মসমালোচনা প্রয়োজন আছে। আত্মসমালোচনা না করলে আত্মশুদ্ধি করা যায় না। আমরা ভুল করেছিলাম, আমাদের বলতে হয় যে, ভুল করেছি। আমি যদি ভুল করে না শিখি, ভুল করে শিখব না, সে জন্য আমি সবই ভুল করলে আর সকলেই খারাপ কাজ করবে, তা হতে পারে না। আমি ভুল নিশ্চয়ই করব, আমি ফেরেশতা নই, শয়তানও নই, আমি মানুষ, আমি ভুল করবই। আমি ভুল করলে আমার মনে থাকতে হবে, আই ক্যান রেকটিফাই মাইসেলফ। আমি যদি রেকটিফাই করতে পারি, সেখানেই আমার বাহাদুরি। আর যদি গোঁ ধরে বসে থাকি যে, না আমি যেটা করেছি, সেটাই ভালো। দ্যাট ক্যান নট বি হিউম্যান বিইং [১৯ জুন ১৯৭৫, বাকশাল কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে দেওয়া ভাষণ]।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সোচ্চার ছিলেন, তার কণ্ঠে শুনিÑ ‘এখনো কিছুসংখ্যক লোক, এত রক্ত যাওয়ার পরেও যে সম্পদ আমি ভিক্ষা করে আনি, বাংলার গরিবকে দিয়ে পাঠাই, তার থেকে কিছু অংশ চুরি করে খায়। এদের জিহ্বা যে কত বড়, সে কথা কল্পনা করতে আমি শিহরিয়া উঠি। এই চোরের দল বাংলার মাটিতে খতম না হলে কিছুই করা যাবে না। আমি যা আনব এই চোরের দল খাইয়া শেষ করে দেবে। এই চোরের দলকে বাংলার মাটিতে শেষ করতে হবে [৩ জানুয়ারি ১৯৭৩, বরগুনায় এক জনসভায় দেওয়া ভাষণ]।’
ছাত্রলীগ তথা ছাত্রদের উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যা বলেছিলেন আজো সে কথা প্রযোজ্যÑ ‘ছাত্র ভাইয়েরা, লেখাপড়া করেন। আপনাদের লজ্জা না হলেও আমার মাঝে মাঝে লজ্জা হয় যখন নকলের কথা আমি শুনি। ডিগ্রি নিয়ে লাভ হবে না। ডিগ্রি নিয়ে মানুষ হওয়া যায় না। ডিগ্রি নিয়ে নিজের আত্মাকে ধোঁকা দেওয়া যায়। মানুষ হতে হলে লেখাপড়া করতে হবে। আমি খবর পাই বাপ-মা নকল নিয়া ছেলেদের- মেয়েদের এগিয়ে দিয়ে আসে। কত বড় জাতি। উঁহু! জাতি কত নিচু হয়ে গেছে [১৮ মার্চ ১৯৭৩, বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জনসভায় দেওয়া ভাষণ]।’ শুধু তাই নয়, তিনি বলেছেনÑ ‘রাস্তা নেই ঘাট নেই, রেলওয়ে ব্রিজ এখন পর্যন্ত সারতে পারি নাই। চরিত্র এত জঘন্য খারাপ হয়ে গেছে যেই ধরি পকেটমাইর ধরি, চোর-গুন্ডা ধরি, লজ্জায় মরে যাই ছাত্রলীগের ছেলে, ভাই-বোনেরা। পুলিশ দিয়া নকল বন্ধ করতে হয় আমার এ কথা কার কাছে কবো মিয়া? এ দুঃখ! বলার জায়গা আছে মিয়া? তোমরা নকল বন্ধ করো। ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন নিয়া সংগ্রাম পরিষদ করেছ, তোমরা গার্ড দিয়া নকল বন্ধ করো। তোমাদের আমি সাহায্য করি। পুলিশ দিয়া আমাদের নকল বন্ধ করতে দিয়ো না তোমরা। পুলিশ দিয়ে আমি চোর সামলাব [১৯ আগস্ট ১৯৭৩, ঢাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে দেওয়া ভাষণ]।’ ছাত্রলীগের কাছে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশা ছিলÑ ‘আমি দেখতে চাই যে, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ফার্স্টক্লাস বেশি পায়। আমি দেখতে চাই, ছাত্রলীগের ছেলেরা যেন ওই যে কী কয়, নকল, ওই পরীক্ষা না দিয়া পাস করা, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলো [১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, ঢাকায় ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণ]।’
একটি দেশের সরকারি কর্মচারীরা কেমন হবে তারও নির্দেশনা আছে বঙ্গবন্ধুর কথোপকথনেÑ ‘সমস্ত সরকারি কর্মচারীকেই আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে, তাদের সেবা করুন। যাদের জন্য যাদের অর্থে আজকে আমরা চলছি, তাদের যাতে কষ্ট না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে, আপনারা অবশ্যই তাদের কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান, একটা নিরপরাধ লোকের ওপরও যেন অত্যাচার না হয়। তাতে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে। আপনারা সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। আপনারা যদি অত্যাচার করেন, শেষ পর্যন্ত আমাকেও আল্লাহর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কারণ, আমি আপনাদের জাতির পিতা, আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী, আমি আপনাদের নেতা। আমারও সেখানে দায়িত্ব রয়েছে [১৫ জানুয়ারি ১৯৭৫, প্রথম পুলিশ সপ্তাহ ও বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণ]।’
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে দেশ গড়ার শপথ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু নেতা হতে চাননি, তিনি সেবক হতে চেয়েছিলেন। আজ যারা নেতা হতে চান, তাদেরকে অনুরোধ করবোÑ বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম অনুসরণ করুন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেম ধারণ করুন। দেশপ্রেম ছাড়া নেতা হওয়া যায় নাÑ এ কথা বঙ্গবন্ধুই আমাদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। শোকাবহ আগস্টে স্বজাতি ও স্বদেশপ্রেমই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
১৯ আগস্ট, ২০১৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 6 7 8 12
September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর হেনা ভাই : অভ্রভেদী আলোকস্তম্ভ

এএইচএম কামারুজ্জামান বাংলাদেশের স্বনামধন্য পুরুষ। তার আসল নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম ‘হেনা’। হেনা নামেই তিনি অধিক পরিচিত […]

August 26th, 2017

Globalization Terrorism & Corruption Changed our Planet Earth

For good or for ill, amongst all the current scientifically known solar planets of the universe, the earth is the […]

August 13th, 2017

Sheikh Mujib : A poet of Politics

Though Bangabandhu was the leader of a small and poor South Asian country, it is doubtful whether any contemporary leader […]

August 13th, 2017

শেখ মুজিব : মৃত্যুঞ্জয় ছায়াবৃক্ষ

বাংলার উর্বর মাটিতে যুগে যুগে অসংখ্য কীর্তিমানের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব প্রাতঃস্মরণীয় কীর্তিমানদের নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কবি, কথাশিল্পী ও গবেষক […]

August 5th, 2017

পুঁজিবাদ ক্যান্সার-আক্রান্ত হয়ে পড়েছে

বর্তমান পৃথিবী হিংসা, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ ও স্বার্থপরতায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। তাই দেশে-দেশে ও মানুষে-মানুষে মারামারি, কাটাকাটি, রক্তপাত লেগেই আছে। মানুষের […]

July 15th, 2017

বদলে যাচ্ছে রাজনীতির ব্যাকরণ

মানুষ সমাজবদ্ধ রাজনীতিসচেতন জীব। জীবন-যাপনের জন্য মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হয়। তৈরি করতে হয় নানারকম প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র মানবরচিত সবচেয়ে বড় […]

June 23rd, 2017

সরকারের শুধু সমালোচনা নয়, ইতিবাচক সমাধান বলুন

ঢাকার বাইরে অবস্থান করে যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় লিপ্ত এবং যাদের লেখা পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় এদের মধ্যে সিলেটের ড. মুহাম্মদ […]

June 23rd, 2017

রাজনীতিতে পুতুল খেলা ও মৌ-দুধ খাওয়া আর কতদিন চলবে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন পুতুল (খালেদা জিয়া) ও একজন মওদুদ (মৌ-দুধ) আহমদ বর্তমানে বেশ আলোচিত। এই আলোচনার কারণ অবৈধভাবে দখলে থাকা […]