List

বাংলা কবে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা হবে

মোনায়েম সরকার
বাংলা ভাষা বাঙালির রক্তমূল্যে কেনা মাতৃভাষা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় পরিণত করার জন্য কোটি বাঙালি সোচ্চার হয়ে রাজপথে নেমেছিল। রাষ্ট্রভাষা দাবির সেই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে ঝরে পড়ে কয়েকটি তাজা প্রাণ। বিশ্বের বুকে সেদিন রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। সেই অমর ইতিহাস ধীরে ধীর পথ তৈরি করে স্বাধিকারের। স্বাধিকার আরোও পরে রূপান্তরিত হয় স্বাধীনতার আকাক্সক্ষায়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লড়াকু বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেছিল যে শক্তির বলে, সেই শক্তির বীজ নিহিত ছিল ’৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের গভীরে। ‘বাংলা ভাষা’ এমন এক ভাষা যে ভাষা মৃত্যুহীন। ষড়যন্ত্রকারীর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রও যে ভাষার কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে সে ভাষার নাম বাংলা ভাষা।
তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার বাংলা ভাষাকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য অপচেষ্টা কম করেনি, কিন্তু লড়াকু বাঙালির কাছে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। বাংলা ভাষা বাঙালির বুকের রক্ত পান করে চিরতরে বাঙালির মুখের ভাষা হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায়। কিভাবে বাংলা ভাষার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হলো সেই ইতিহাস না বলে শুধু এই টুকু বলতে চাইÑ ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর ৩০তম অধিবেশন বসে। ইউনেস্কোর সেই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব পাস হয়। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে পৃথিবীর ১৮৮টি দেশে এ দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। অবশ্য এই পুরো ঘটনার পেছনে কানাডার বহুভাষিক ও বহুজাতিক মাতৃভাষা প্রেমিক-গোষ্ঠীর যে অসামান্য অবদান ছিল, তার কোনো তুলনা নেই।
বাঙালি জাতি বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিলেও বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বস্তরে এখনো প্রচলন করতে পারেনি। কিছু কিছু বাঙালি আছে আরবি ভাষার উপর যাদের অনুরাগ সীমাহীন। এরা কেউ অতীতে বাংলা ভাষাকে ভালো চোখে দেখেনি, ভবিষ্যতেও দেখবে না। আরেক শ্রেণি আছে নিজেদের যারা সাহেব ভাবতে ভালোবাসে, এরা চলনে-বলনে ইংরেজ হওয়ার স্বপ্ন দেখে, চর্চা করে ইংরেজির। যদিও এরা বাঙালি। এরাও বাংলা ভাষা বিদ্বেষী। এদের ক্ষমতা অনেক, এরা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরে থাকলেও রাষ্ট্র এদের তেমন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। এরা বাংলা ভাষাকে নি¤œ শ্রেণির ভাষা মনে করে। বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও যারা বাংলা ভাষাকে ভালোবাসে না, বাংলার বিরুদ্ধেই বরং যাদের অবস্থান, তাদের কাছ থেকে কখনোই বাংলা ভাষার উন্নতি আশা করা যায় না।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলতে চাই, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে মানুষগুলো ভাষা আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল, তারা সকলেই ছিল সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলেই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। কানাডার ভাষাপ্রেমিক গোষ্ঠীও একেবারে সাধারণ একটি সংগঠন যে সংগঠন স্বেচ্ছায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দিয়েছিল। দুটো বিষয়ের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য একটি জায়গায় এসে মিলে গেছে, সেটা হলো বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য রাজপথে লড়েছিল সাধারণ মানুষÑ বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক চেতনাকে বিশ্ববাসীর কাছেও তুলে ধরেছিল সাধারণ মানুষ। কাজ মূলত সাধারণ মানুষই করে কিন্তু ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠান। প্রাতিষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়া কোনো কিছুই যেহেতু স্বীকৃতি পায় না তাই প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করতে হয় স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।
বাংলা ভাষার গৌরব করার মতো এক সময় কিছু না থাকলেও এখন অনেক কিছুই আছে। বাংলাকে অবজ্ঞা করে একদিন বাংলার অমর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি ভাষায় কাব্যচর্চা করেছিলেন, তিনি পরভাষায় কাব্যচর্চা করে খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও মাইকেলের মতো প্রথম জীবনে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলেন। প্রায় বারো বছর তিনি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য চর্চা করে এক সময় বাংলার কাছে ফিরে আসেন। বাংলা ভাষাই আজ মাইকেল-বঙ্কিমকে অমরত্ব দান করেছে।
বাংলা ভাষা এই মুহূর্তে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেই জায়গায় এসে আজ নতুনভাবে একটি বিষয় জোরালোভাবে ভাবা দরকার, সেটি হলো জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি। বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অনেক কারণ আছে। সেই কারণগুলো যদি আমরা তলিয়ে দেখি তাহলে দেখবোÑ সারাবিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে। যা কিনা ফরাসি ভাষার সমতুল্য। বাংলা ভাষার সাহিত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাধ্যমে এশিয়ার মধ্যে প্রথম নোবেল পুরস্কারে বিভূষিত হয়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’ও লাভ করে অস্কারের মতো মর্যাদাবান পুরস্কার। শুধু এখানেই শেষ নয়Ñ বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ’৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে আন্দোলন হয়েছিল সেই ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত এবং সারাবিশ্বে সসম্মানে পালনীয়। যে ভাষার সম্মানে সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়, সেই ভাষা জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেতেই পারে।
২০০১ সালের ১৫ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের ১৯৭তম অধিবেশনের সুপারিশ অনুযায়ী ইউনেস্কোর জেনারেল কনফারেন্সের ৩৮তম অধিবেশনে এই ইনস্টিটিউটকে ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটা অসামান্য অর্জন। কেননা বাংলাদেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠান ইতঃপূর্বে ইউনেস্কোর প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। বাংলা ভাষাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে কাজে লাগানো যায় কিনা সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার।
পৃথিবীর প্রায় ২১টি দেশে বাংলা ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে সরকারিভাবে বাংলাদেশ, ভারত এবং আফ্রিকা মহাদেশের সিয়েরালিওনে বাংলার প্রচলন লক্ষণীয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার বিধানসভা বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, জননেত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসঙ্ঘের ৬৪তম অধিবেশনে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার আহ্বান জানান। জাতিসঙ্ঘ এই মুহূর্তে ৬টি ভাষা দাপ্তারিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। জাতিসঙ্ঘের সকল দলিল দস্তাবেজ এই ছয়টি ভাষায়ই লেখা হয়। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা হলোÑ আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, ম্যান্ডারিন (চীনা ভাষা), রুশ ভাষা ও স্প্যানিশ ভাষা। এই ছয়টি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাকেও আমরা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রত্যাশা করি। আজ যদি বাংলা ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়Ñ তাহলে এই ভাষার মধ্য দিয়ে সকল মাতৃভাষাকেই সম্মান প্রদর্শন করা হবে। কেননা এ ভাষার স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মহান মর্যাদা।
’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য ভূমিকা ছিল। মাতৃভাষা বাংলাকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনিই প্রথম জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ভাষণ দান করেন। তার সেই ভাষণ সেদিন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছিল। এরপর তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার সমস্ত কর্মকা-ে ষোলো কোটি বাঙালির অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। তার প্রতিটি সিদ্ধান্তই দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনছে। বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাও বাংলা ভাষার অকৃত্রিম অনুরাগী। তার দৃঢ় নেতৃত্বে ও কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলা ভাষা একদিন জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা পাবে ৩০ কোটি বাংলা ভাষীর মতো আমিও এ কথা বিশ্বাস করি।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
11 জানুয়ারি, ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 6 7 8 12
September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর গুড সিস্টার, সুবর্ণ সত্তরে স্বাগত

মাত্র আটাশ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃ-ভ্রাতৃহীন হন শেখ হাসিনা। একজন সাধারণ গৃহবধূ আর মুজিব কন্যা ছাড়া তখন তার অন্য কোনো পরিচয় […]

September 27th, 2017

মান্যবর হেনা ভাই : অভ্রভেদী আলোকস্তম্ভ

এএইচএম কামারুজ্জামান বাংলাদেশের স্বনামধন্য পুরুষ। তার আসল নাম আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান। ডাক নাম ‘হেনা’। হেনা নামেই তিনি অধিক পরিচিত […]

August 26th, 2017

Globalization Terrorism & Corruption Changed our Planet Earth

For good or for ill, amongst all the current scientifically known solar planets of the universe, the earth is the […]

August 13th, 2017

Sheikh Mujib : A poet of Politics

Though Bangabandhu was the leader of a small and poor South Asian country, it is doubtful whether any contemporary leader […]

August 13th, 2017

শেখ মুজিব : মৃত্যুঞ্জয় ছায়াবৃক্ষ

বাংলার উর্বর মাটিতে যুগে যুগে অসংখ্য কীর্তিমানের আবির্ভাব ঘটেছে। এই সব প্রাতঃস্মরণীয় কীর্তিমানদের নিয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন কবি, কথাশিল্পী ও গবেষক […]

August 5th, 2017

পুঁজিবাদ ক্যান্সার-আক্রান্ত হয়ে পড়েছে

বর্তমান পৃথিবী হিংসা, দ্বন্দ্ব, যুদ্ধ ও স্বার্থপরতায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। তাই দেশে-দেশে ও মানুষে-মানুষে মারামারি, কাটাকাটি, রক্তপাত লেগেই আছে। মানুষের […]

July 15th, 2017

বদলে যাচ্ছে রাজনীতির ব্যাকরণ

মানুষ সমাজবদ্ধ রাজনীতিসচেতন জীব। জীবন-যাপনের জন্য মানুষকে সমাজে বসবাস করতে হয়। তৈরি করতে হয় নানারকম প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র মানবরচিত সবচেয়ে বড় […]

June 23rd, 2017

সরকারের শুধু সমালোচনা নয়, ইতিবাচক সমাধান বলুন

ঢাকার বাইরে অবস্থান করে যারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় লিপ্ত এবং যাদের লেখা পত্রপত্রিকায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয় এদের মধ্যে সিলেটের ড. মুহাম্মদ […]

June 23rd, 2017

রাজনীতিতে পুতুল খেলা ও মৌ-দুধ খাওয়া আর কতদিন চলবে?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন পুতুল (খালেদা জিয়া) ও একজন মওদুদ (মৌ-দুধ) আহমদ বর্তমানে বেশ আলোচিত। এই আলোচনার কারণ অবৈধভাবে দখলে থাকা […]