List

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দুই বছর পরেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঝাঁক লড়াকু নেতার অংশগ্রহণে এই দলটির জন্ম হয়। দেখতে দেখতে বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল ৬৭ বছর অতিক্রম করল। এই ৬৭ বছরে দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেনÑ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো অনন্য নেতৃবৃন্দ। এখন এই দলের হাল ধরে আছেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। গত ২২-২৩ অক্টোবরে দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষ নানারকম স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। অবশ্য গণমানুষের এই স্বপ্ন দেখা অযৌক্তিক কিছু নয়। যারা বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে তাদের একমাত্র ভরসা তো আওয়ামী লীগই। বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা শুধু অকল্পনীয় বিষয়ই নয়, অযৌক্তিকও। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনের স্লোগান ছিলÑ ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।’ এই স্লোগানের প্রতিটি শব্দই আজ বাংলাদেশের জন্য সত্য ও বাস্তব। দারুণ এক ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের হাল ধরেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ভগ্নদশা থেকে দল ও দেশকে টেনে তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে মডেল। বিগত সাড়ে সাত বছরে বাংলাদেশে যে অসম্ভব উন্নয়ন হয়েছে আগামী দিনের ইতিহাসে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে।
সাম্প্রতিক জাতীয় সম্মেলন নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। যারা আওয়ামীপন্থী তাদের কাছে এবারের সম্মেলন ছিল স্মরণকালের সেরা সম্মেলন। যারা আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী তাদের কাছে এই সম্মেলন তেমন সার্থক নয় বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। বিএনপি এই সম্মেলনের কোনো ইতিবাচক দিকই খুঁজে পায়নি। এটা অবশ্য না পাওয়ারই কথা। বিএনপির নেতা-নেত্রীরা কখনোই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে না। তাদের আগ্রহ ষড়যন্ত্র আর মৌলবাদ বিস্তারের দিকে। সুতরাং আওয়ামী লীগ যেহেতু এবারের সম্মেলনে তাদের গঠনতন্ত্রে মৌলবাদ তথা জঙ্গিবাদ সম্পর্কে প্রস্তাব পেশ করেছে এবং রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের দলীয় বৃত্তের বাইরে রাখতে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাই বিএনপির মতো ডানপন্থী দলের চোখে এসব ভালো না লাগারই কথা। ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সম্মেলনস্থলসহ পুরো ঢাকা শহর নতুন সাজে সেজে ছিল। মধ্যরাতেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেমেছিল মানুষের ঢল। দিকে দিকে নেতাকর্মীদের মিছিল সাধারণ মানুষের কৌতূহল এবং বিদেশি বন্ধুদের আগমনে এই সম্মেলন পেয়েছিল নতুন মাত্রা। প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হওয়া এই সম্মেলনে উৎসব উদ্যাপন নয় বরং দলের আত্মসমালোচনাই ছিল মুখ্য বিষয়।
শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ ছিল একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। এই রাজনৈতিক প্লাটফর্ম পরে রূপ নেয় সাহসী রাজনৈতিক পার্টিতে। সূচনালগ্নে নেতা ও নীতিই ছিল এই দলের অমূল্য সম্পদ। এখন নেতা আছেন কিন্তু নীতির প্রশ্নে নানারকম কথা শোনা যাচ্ছে। নীতির প্রশ্নে দলটি যদি অনড় ও অবিচল না থাকে তাহলে এই পার্টি জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা ও সমর্থন পেতে ব্যর্থতার পরিচয় দিবে।
এবারের সম্মেলন এমন একটি মুহূর্তে সম্পন্ন হলো যেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বর্ণযুগ পার করছে। এই যুগকে আরো দীর্ঘ করতে হলে তাকে আগামী নির্বাচনে কৌশলগত অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। সম্মেলন থেকে সেই বার্তাও পেয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীবৃন্দ ও দেশের সাধারণ মানুষ। যারা দুর্নীতিবাজ, লোভী, সুযোগ সন্ধানী (হাইব্রিড) ও চিহ্নিত সন্ত্রাসী এই সম্মেলনে তারা ঝরে পড়েছে। অপরদিকে যারা বিনয়ী, ভদ্র, পরিশ্রমী তরুণ ও প্রগতিশীল তাদেরকে বেশি বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা পর্যালোচনা এবং দলটিকে জঞ্জালমুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক বাতাবরণ তৈরি করাও এই সম্মেলনের অন্যতম সাফল্য বলেই আমি মনে করি। আওয়ামী লীগে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের চর্চা আগেও ছিল এখনও আছে। তবে মাঝে মাঝে সুস্থ দেহেও ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধেÑ তদ্রƒপ আওয়ামী লীগের বিশাল বৃক্ষেও কখনো কখনো নীড় খুঁজেছে দলছুট, দুর্নীতিবাজ-নীতিভ্রষ্ট সুবিধাবাদীরা। আবার তারা যাযাবর পাখির মতো চলেও গেছে আওয়ামী লীগ ছেড়ে। এ রকম যাওয়া-আসা দলের ভেতরে থাকেই। তবে দলের নীতি-নির্ধারক মহল যদি বিচক্ষণ হয়, তাহলে এতে দলের কোনো ক্ষতি হয় না। আওয়ামী লীগ থেকে এবার যারা পদ হারালো এটা তাদের কর্ম ফলের কারণে হয়েছে। এমন কি যারা নতুন করে পদ-পদবি পেয়েছে, তারা তা কর্মফলের কারণেই পেয়েছে। আওয়ামী লীগ বুঝেছে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। দুষ্টু গরুর উপদ্রব থেকে পুরো গোয়াল মুক্ত রাখতে যা করণীয় তা-ই আওয়ামী লীগ করছে। এটা করতেই হবে। কেননা অতীত ইতিহাস বলছে, যারা আওয়ামী লীগ থেকে দলছুট হয় তারা ধ্বংস হয়ে যায়, যারা আওয়ামী লীগে এসে যোগ দেয়, তাদের ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগ পরশপাথরতুল্য রাজনৈতিক সংগঠন। দিনে দিনে এর উত্থান আরো ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
২.
বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে যেই জায়গায় নিয়ে গেছেন তা কল্পনারও বাইরে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোনো রাজনৈতিক শক্তি দেশে নেই। তাছাড়া দলটি গত আট বছরে বেশ কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকা- করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের আপেক্ষিক হার হ্রাস, আট বছর ধরে অব্যাহতভাবে ছয় ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখা (বর্তমানে যা ৭.১১ শতাংশ), বিশ্ব ব্যাংকের বিরোধিতার মুখেও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন তথা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর প্রভৃতি সাফল্য আওয়ামী লীগকে দিয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। এর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র হলেও এই চারটি শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সরকারের সুসম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরকালে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তির সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করে দুই বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্বেচ্ছায় দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এর আগে কখনো এমন সুসময় পার করেছে বলে ইতিহাসে নজির নেই। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছেÑ অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বর্তমানে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার এখন ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৪ শতাংশ। বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ৩১.৩২ বিলিয়ন ডলার। এই সরকারের আমলে দেশে-বিদেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা, আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অসংখ্য সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ, উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমানসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন বাংলাদেশে এখন দৃশ্যমান সত্য।
পূর্ববর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলাদেশকে বানিয়েছিল মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের কারখানা। সে সময় যেখানে সেখানে বোমা হামলা হতো, এমন কি ৬৩টি জেলায়ও এক সঙ্গে বোমা হামলার নজির রয়েছে। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তা জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হলে অবশ্যই বাহাত্তরের সংবিধানে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। বাহাত্তরের সংবিধান আওয়ামী লীগের হাতেই রচিত হয়েছিল। ওই সংবিধানই আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের রক্ষাকবচ। সময় লাগলেও শেখ হাসিনা সরকারকে বাহাত্তরেই ফিরে যেতে হবে। তাহলে সমস্ত উন্নয়ন টেকসই হবে। তা না হলে মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মান্ধ ও রক্ষণশীল মুসলিম দেশগুলোর ভাগ্যই বরণ করতে হবে বাংলাদেশকে।
৩.
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং আওয়ামী লীগের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা। যখনি বাংলাদেশের মাটিতে ঘাতকচক্র ও বিরোধী শিবিরের ষড়যন্ত্রে আওয়ামী লীগ বিপর্যস্ত হয়েছে তখনই বাংলাদেশের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম
অশান্তি কিংবা সামরিক থাবা। বাংলাদেশের জন্য লড়েছে আওয়ামী লীগ, বর্তমানে দেশও গড়ছেও আওয়ামী লীগ। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে স্বচ্ছ, সুন্দর ও আত্মসমীক্ষার মুখোমুখি হওয়া দরকার। দল এখন ক্ষমতায় আছে। ক্ষমতায় থাকলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে কিন্তু পর্যবেক্ষণ শক্তি কমে। আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা বর্তমান বিশ্বে অতুলনীয় নেত্রী। তিনি একাই আওয়ামী লীগের ভার বহন করতে সক্ষম। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, শেখ হাসিনা যতই ক্লিন ইমেজ তৈরি করুন না কেন যদি তার দলীয় লোকজন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, দলীয় নীতি বিসর্জন দিয়ে অবৈধভাবে মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে সামনে ভরাডুবি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। অনেক নেতারই মাঠে জনপ্রিয়তা নেই, অনেকেই এলাকায় তেমন কোনো কাজ করছেন না, অনেকেই শুধু ধান্ধায় আছেন কিভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বানাবেন ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হবেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধেই সীমাহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ আছে। কেউ কেউ শুধু নিজে নয়, পুত্র ও জামাতাকেও ব্যবহার করেছে দুর্নীতি করতে। কারো কারো সন্ত্রাসী কার্যকলাপে প্রশ্রয় পাচ্ছে দুই খুন, তিন খুন, সাত খুনের আসামিরা। এগুলো জনগণের কাছে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছায়। এই বিষয়ে অবশ্যই সভানেত্রীর সুদৃষ্টি থাকা দরকার। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমনকি পৌরসভার নির্বাচনেও কোনো কোনো নেতা দলীয় প্রতীক নৌকা টাকার বিনিময়ে বিএনপি ও জামায়াতি লোকের হাতে তুলে দিয়েছে। এইসব নির্বাচন বাণিজ্যে তারা লক্ষ লক্ষ নয়, কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দাপট লক্ষণীয়। তাদের ঘুষ-দুর্নীতির কথাও মাঝে মাঝে প্রকাশ হচ্ছে পত্রিকায়।
এসব ব্যাপারে এখনি সচেতন হওয়া দরকার। তা না হলে আগামী নির্বাচনে দলের ভাগ্যে কি হবে কেউ বলতে পারে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও পুলিশের উৎপাত বাংলাদেশের মানুষকে ভীষণ ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর সীমাহীন দুর্নীতি ও অকারণ হয়রানি জনমনে ভীষণ ভীতি ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে ভবিষ্যতে দল গর্তে পড়তে পারে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আরো কন্ট্রোল করা দরকার। এদের বিরুদ্ধে মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত আট বছরে এই তিন সংগঠনের আটটি ভালো কাজের দৃষ্টান্ত আছে কিনা সন্দেহÑ তবে তাদের বিরুদ্ধে আট লক্ষাধিক অভিযোগ তৈরি হয়েছে জনমনে। দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করবে, যারা দলের সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করবে, তাদের দলে না রাখাই সমীচীন হবে। নির্বাচনের আগে মনোনয়ন দেওয়ার মুহূর্তে তাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে যাদের বিজয়ে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকবে না। এজন্য অবশ্য দলীয় প্রধানকে একটু কঠোর হতে হবে। আমি জানি তিনি অতটুকু কঠোর হওয়ার মানসিকতা পোষণ করেন।
ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বিশ্বের সেরা ৪৪টি বক্তৃতা নিয়ে জেকব এফ. ফিল্ড যে বক্তৃতা সংকলন বের করেছেন, যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের বক্তৃতা স্থান পেয়েছে। জেকব তাঁর সংকলনের নাম দিয়েছিলেন চার্চিলের বক্তৃতার অংশ থেকে ডব ংযধষষ ভরমযঃ ড়হ ঃযব ইবধপযবং (ঞযব ংঢ়ববপযবং ঃযধঃ রহংঢ়রৎবফ ঐরংঃড়ৎু)। সেই চার্চিলও পরবর্তী নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছিল। সেই কথা মনে রেখে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে দল ও সরকার পরিচালনা করতে হবে। দীর্ঘ তেইশ বছর সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যেভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়েছিলেন ঠিক সেই জায়গায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যেতে হবে। মৌলবাদী ও পাকিস্তানি ভাবধারা থেকে মানুষের ‘মাইন্ডসেট’ পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক ভাবধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি এটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্য।
বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা উচ্চতম স্থানে নিয়ে গেছেন। এখন মানুষের মাঝে অনেক আশা তৈরি হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারছে আসলেই দেশের উন্নতি হচ্ছে। এই জন্যই রাজপথে বিরোধী দলের মিছিল-মিটিং জনশূন্য। কেউ আর অকারণে রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না। এটা আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত শুভ লক্ষণ। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যদি কোনো কারণে বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার সব উন্নয়ন সূচক হারাবে ঠিকই কিন্তু আওয়ামী লীগ হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সব দিক সামাল দিয়ে এখন ঠান্ডা মাথায় সরকার ও দল পরিচালনা করতে হবে। মন্ত্রিপরিষদকেও স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চান সেখানে নিতে গেলে অবশ্যই আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি সঠিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে, কেননা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ আর বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা।
২৯ অক্টোবর, ২০১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 7 8 9 12
June 23rd, 2017

‘শিক্ষা’ থেকে কালো মেঘ কেটে যাক

বাংলাদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু দিন আগে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। দেশে ও বিদেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকায়, এমনকি দেশের ও […]

June 23rd, 2017

অনন্য সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৪৮তম মৃত্যুদিবস স্মরণে তিনি স্বপ্ন দেখেও স্বাধীন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেনি

তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া বাংলাদেশের এক কীর্তিমান পুরুষ। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তিনি যেই জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের […]

June 23rd, 2017

বাংলাদেশের রাজনীতি : অতীত ও বর্তমানের খতিয়ান

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর পালে জোরেশোরে হাওয়া লেগেছে বলেই মনে হয়। ইতোমধ্যেই বেগম খালেদা জিয়া তার দলের […]

January 23rd, 2017

আওয়ামী লীগকেই গড়ে তুলতে হবে আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

বর্তমান বিশ্ব দারুণ অস্থিতিশীল প্রকৃতি, প্রতিবেশ ও পরিবেশের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। সারা পৃথিবীতে কোথাও কোনো শান্তি নেই। প্রত্যেকেই আজ বেপরোয়া […]

January 23rd, 2017

ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ও আগামী পৃথিবী কোন পথে

বর্তমান পৃথিবী ক্রমে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পরিবেশ দূষণের ফলে জলবায়ু যেমন হুমকি হয়ে উঠেছে মানুষের জন্য তদ্রƒপ মানুষও নানাবিধ […]

December 27th, 2016

মৃত্যুঞ্জয় বাংলা ভাষা

বাংলা ভাষা এক সহ¯্রাব্দ অতিক্রম করে আরেকটি নতুন সহ¯্রাব্দের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। শুরু থেকেই বাংলা ভাষার যাত্রাপথ নানা সংকটে […]

December 18th, 2016

Human Fate in 20th & Twenty-first Century

In 20th-Century the term fascist was first applied to a political movement combining ultra nationalism with hostility both to the […]

December 14th, 2016

৪৫তম বিজয় দিবসে একাত্তরের চেতনায় জেগে উঠার সময় এসেছে

এবারের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৫তম বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই বিশেষ দিনটিতে ২৬ মার্চ ’৭১-এ সূচিত মহান মুক্তিযুদ্ধের […]

December 8th, 2016

চিরবিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রোর প্রয়াণ ও ইতিহাসের শাপমোচন

২৫ নভেম্বর, ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে নব্বই বছর বয়সে বর্ণাঢ্য বিপ্লবী জীবনের ইতি টেনে চিরবিদায় নেন কিউবান বিপ্লবী নেতা ফিদেল আলেজান্দ্রো ক্যাস্ট্রো […]

November 29th, 2016

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দুই বছর পরেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ […]