List

শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু : জুলিও ক্যুরি শান্তি পদকের প্রাসঙ্গিকতা

মোনায়েম সরকার
মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেন। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ নীতি পরিহার করে সকলের সাথে বন্ধুত্বের ভিত্তিতে তাঁর বৈদেশিক নীতি ঘোষণা বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে চির অম্লান করে রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও ক্যুরি’ পদকে ভূষিত করেন।
ম্যারি ক্যুরি ও পিয়েরে ক্যুরি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী। ম্যারি ক্যুরির পোল্যান্ডে জন্ম হলেও তিনি পিয়েরে ক্যুরিসহ ১৮৯১ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরের শরবনে বসবাস শুরু করেন। রেডিওলজির উপর উইলিয়াম রঞ্জেনের আবিষ্কারের পথ ধরে ক্যুরি দম্পতি তাদের গবেষণা চালিয়ে যান এবং পলোনিয়াম ও রেডিয়াম এর মৌল উদ্ভাবন করেন। তাদের উদ্ভাবন পদার্থ বিদ্যায় এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। ক্যুরি দম্পতি পদার্থ বিদ্যায় ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯১১ সালে রসায়ন শাস্ত্রেও নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন। ক্যুরি দম্পতির কন্যা আইরিন ক্যুরি ১২ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৭ সালে ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এবং তার স্বামী ফ্রেডরিক জুলিয়েট রেডিওলজির উপর পিতা-মাতার পথ অনুসরণ করে গবেষণা চালাতে থাকেন এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় রশ্মি উদ্ভাবন করে ১৯৩৫ সালে রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে আইরিনের বয়স যখন ১৮ তখনই তিনি তার মায়ের সাথে ২০টি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসা কাজে পিতা মাতার আবিষ্কৃত রেডিও কেমিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাক্তারদের দ্বারা দ্রুত চিকিৎসা বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখে এই দম্পতি অনুমান করেন যে, ফ্যাসিস্টরা তাদের পিতা মাতা এবং তাদের আবিষ্কার মানবতার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে। এই ধারণা থেকে তারা ১৯৩৯ সালের ৩০ অক্টোবর তাদের আবিষ্কারের সমস্ত প্রমাণ-পত্রাদি ফ্রান্সের একাডেমিক অব সায়েন্সের ভল্টে জমা করেন।
পিতা-মাতা ও নিজেদের অপরিসীম পরিশ্রমের ফসল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় শান্তির স্বপক্ষে ক্যুরি দম্পতি স্বদেশের একাডেমিক অব সায়েন্সের জন্য উৎসর্গ করেছেন। বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে এই বিজ্ঞানী দম্পতির মহান অবদান চিরস্মরণীয় করে রাখার লক্ষে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী, সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে, মানবতার কল্যাণে শান্তির স্বপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি অদ্বিতীয় অগ্রনায়ক, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণার নায়ক, বাংলাদেশের স্থপতি, অবিস্মরণীয় ও বরণীয় রাজনীতির কবি, শতাব্দীর মহানায়ক, বিশ্ববন্ধ,ু বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘জুলিও ক্যুরি’ শান্তি পদক সবই তাঁর অর্জন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় মিশন স্কুলে লেখা পড়ায় হাতেখড়ি। ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় ফিরে ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৪৮ ও ’৫২ সালে কারাবরণ করেন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির উপর নির্যাতন, নিপীড়ন শেখ মুজিব মেনে নিতে পারেননি। ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে নতুন দল গঠন করা হয়Ñ আওয়ামী মুসলিম লীগ। জেলে থাকা অবস্থায় সেই কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে গোপালগঞ্জ আসনে তের হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। কনিষ্ঠতম সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি ও বন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন।
১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ৬-দফা দাবি পেশ করেন। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আওয়ামী লীগের ৬-দফা অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের ১১-দফা দাবিনামা পেশ করে।
৭ নভেম্বর ১৯৬৯ পাকিস্তানে আমেরিকার দূতাবাসের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, Sheikh Mujib is in fact Uncrowned King of East Pakistan অর্থাৎ শেখ মুজিব প্রকৃতপক্ষেই পূর্ব পাকিস্তানের মুকুটহীন সম্রাট। ১৯৭০-এর জুনেই ঢাকাস্থ মার্কিন কূটনীতিক আর্চার ব্লাডকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন I will proclaim Independance and call for guerilla action if any army tries to stop me সামরিক বাহিনী যদি আমাকে বাধা দেয়, তাহলে আমি স্বাধীনতা ঘোষণা করবো আর গেরিলা যুদ্ধের ডাক দেবো’। গণআন্দোলন যখন গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেয়, তখন ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবসহ ৩৫ জন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি লাভ করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ ফেব্রুয়ারি ’৬৯ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে এক গণসংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করে। দশ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঢাকায় এত বড় সভা পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়নি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সভার সভাপতি ও ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। শেখ মুজিব পরিণত হলেন ‘বঙ্গবন্ধু’তে।
ছাত্র-জনতার তীব্র দাবির মুখে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ১৯৭১ এর ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। মানুষ সর্বাত্মক আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেখ মুজিব বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মূলত স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কোটি কোটি বাঙালির দাবির প্রেক্ষিতে ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয় ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জনগণের নেতা বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর বিশ্ব শান্তি ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘জুলিও ক্যুরি’ শান্তি পদক প্রদান এক বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্ব পরিস্থিতি, শান্তি, প্রগতি, গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের এবং গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অনুকূলে পরিবর্তিত হয়েছিল। এ সময় উপমহাদেশে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর সৎ প্রতিবেশীমূলক সম্পর্ক স্থাপন ও উপমহাদেশে শান্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়। মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে ভারত-সোভিয়েত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি ১৯৭১ এবং বাংলাদেশ-ভারত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি ১৯৭২, বাংলাদেশের মৈত্রী-সম্পর্কে এই উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি স্থাপনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির বিপরীতে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ এবং শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের নীতির ফলে বাংলাদেশ বিশ্ব সভায় একটি ন্যায়ানুগ দেশের মর্যাদা লাভ করে। সকলের প্রতি বন্ধুত্বের ভিত্তিতে বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’ সেই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্ব শান্তির স্বপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। পৃথিবীর ১৪০টি দেশের শান্তি পরিষদের ২০০ প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পদকে ভূষিত করার পেছনে বাংলাদেশ শান্তি পরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলী আকসাদেরও যথেষ্ট ভূমিকা ছিল।
উক্ত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালের মে মাসে এশিয়ান পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি কনফারেন্স অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ঢাকায় দু’দিন ব্যাপী এক সম্মেলনের আয়োজন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ব শান্তি পরিষদের শাখাসমূহের বহু প্রতিনিধি এই সভায় মিলিত হন। এসব প্রতিনিধি ছাড়াও আপসো, পিএলও, এ এম সি সোয়াপো ইত্যাদি সংস্থার অনেক প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছিল। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন ২৩ মে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় উন্মুক্ত চত্বরে সুসজ্জিত প্যান্ডেলে বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের বিশাল সমাবেশে বিশ্বশান্তি পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক পরিয়ে দিয়ে বলেনÑ ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’
জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভারতের ৩৫ জন প্রতিনিধির নেতা কৃষ্ণ মেনেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আন্দোলনের প্রখ্যাত নেতা জন রীড উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পূর্বে যারা জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনÑ ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভেদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহেরু, মার্টিন লুথার কিং, নিওনিদ ব্রেজনেভ প্রমুখ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত উক্ত এশীয় শান্তি সম্মেলনের ঘোষণায় এউ উপমহাদেশে শান্তি ও প্রগতির শক্তিসমূহের অগ্রগতি নিশ্চিত করে।
বিশ্বশান্তি পরিষদ কর্তৃক জুলিও ক্যুরি পদকে ভূষিত স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ ও বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আজ আমাদের মাঝে নেই, সা¤্রাজ্যবাদের নীলনকশা অনুযায়ী এক ঘৃণ্য ঘাতকচক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু আজ উপস্থিত না থাকলেও তার মহান আদর্শ, উদ্দেশ্য এবং তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আছে। বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন, চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পাঁচ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৫০ সালে একটি শান্তিপূর্ণ পৃথিবী নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করে জুলিও ক্যুরি শান্তি পদক। পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠাই ছিল এই পদকের মূল লক্ষ্য। আজকের পৃথিবী অশান্তির আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে। চারদিকেই আজ মারণাস্ত্রের মহড়া চলছে মানুষ হত্যা করার জন্য। সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো ক্রমে ক্রমে হিং¯্র হচ্ছে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। পৃথিবীর মানুষ আজ একটি নতুন মানবিক বিশ্ব ব্যবস্থা প্রত্যাশা করলেও মানুষকে কিছুতেই মানবিক করা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে শান্তির বাণী আরো বেশি করে উচ্চারণ করা দরকার। একবিংশ শতকের এই চরম উৎকর্ষের কালেও জুলিও ক্যুরি শান্তি পদকের প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। ২৩ মে এলেই মনে হয় আমরা দারুণ অশান্তির মধ্যে আছি, আজ আমাদের শান্তি প্রয়োজন।
মোনায়েম সরকার : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
১৮ মে, ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  Posts

1 8 9 10 12
November 29th, 2016

ভোগান্তরি আরকে নাম ভারতরে ভসিা

১১ নভম্বের, ২০১৬ তারখিে ‘দনৈকি আমাদরে সময়’-এ কবি ও সম্পাদক অমতি গোস্বামী ‘ভারতীয় ভসিা প্রাপ্তি নয়িে টালবাহানা’ শরিোনামে একটি কলাম […]

November 29th, 2016

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : রোজ গার্ডেন টু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

বঙ্গীয় ভূখ-ে রাজনৈতিক দুরবস্থার অবসান ঘটাতে প্রথম যে দল জনগণের আশা-আকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় তার নাম বাংলাদেশ আওয়ামী […]

November 29th, 2016

পজেটিভ বুদ্ধিবাদিতা ও বুদ্ধিজীবীর দায়

আজ তেসরা নভেম্বর জাতীয় জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নির্মমভাবে শহিদ হয়েছিলেন জাতীয় চার […]

November 29th, 2016

শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে জনমনে সীমাহীন অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এমন কোনোদিন নেই যেদিন পত্র-পত্রিকায় ও টেলিভিশনের টক-শোগুলোতে আমাদের শিক্ষার অব্যবস্থাপনা […]

October 4th, 2016

যখন প্রশ্ন আসে যুদ্ধ না শান্তি? আমরা জবাব দেই শান্তি শান্তি শান্তি!

যখন প্রশ্ন আসে যুদ্ধ না শান্তি? আমরা জবাব দেই শান্তি শান্তি শান্তি! মোনায়েম সরকার বর্তমান পৃথিবী হিংসা আর স্বার্থপরতায় উন্মত্ত […]

September 8th, 2016

বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদী চেতনার উত্থান ও শোষিতের জেগে ওঠা

বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদী চেতনার উত্থান ও শোষিতের জেগে ওঠা মোনায়েম সরকার আমার বিগত দিনের একটি লেখায় বলেছিলামÑ সারা পৃথিবীর মানুষকে ইতিহাস, […]

September 6th, 2016

জন কেরির ঢাকা সফর ও ফিরে দেখা একাত্তর

জন কেরির ঢাকা সফর ও ফিরে দেখা একাত্তর মোনায়েম সরকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি গত ২৯ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে ঢাকা […]

August 15th, 2016

বঙ্গবন্ধুর জাতীয় ঐক্যের ডাক

আগস্ট শোকের মাস। এই আগস্ট মাসেই বাঙালি জাতি হারিয়েছে তাদের অনেক কৃতী সন্তান। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা ১৯৪১ সালের ৭ […]

July 19th, 2016

অতীত আলোকে সংলাপের আদৌ প্রয়োজন আছে কি?

অতীত আলোকে সংলাপের আদৌ প্রয়োজন আছে কি? মোনায়েম সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সংলাপ- এই তিনটি শব্দ আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে, […]

July 19th, 2016

সমাজতন্ত্রের রক্তাক্ত অতীত ও কাল্পনিক ভবিষ্যৎ

সমাজতন্ত্রের রক্তাক্ত অতীত ও কাল্পনিক ভবিষ্যৎ মোনায়েম সরকার মানুষ শোষণ থেকে মুক্তি চায়। মুক্তি মানে মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে সব মানুষ […]